প্রশ্নটা দেশপ্রেমের— কার, কোথায় দায়?
মধ্য জুলাইয়ে তুঙ্গে ওঠার প্রায় দেড় মাস আগে থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন দৃশ্যমান হতে শুরু করে। ধারণা করা যায়, আমাদের গোচরে আসার আগে থেকেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হতে থাকে। যোগাযোগ বলয় গড়ে তুলতে তাদের আরও খানিকটা সময় লেগেছিল। ভুলত্রুটি, অসঙ্গতি আর সমন্বয়হীনতা থাকলেও, আন্দোলনটাকে অযৌক্তিক অভিহিত করার কোনো সুযোগ নেই। কোটা সংস্কারের অবশ্যকতা ছিল। তবে আন্দোলনের পেছনে সরকারবিরোধী কুশীলবদের সংশ্লিষ্টতাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আন্দোলন ঘিরে প্রশ্ন হলো, একটি কার্যকর রাষ্ট্র, সরকার এবং সংসদ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় বিষয়টি আন্দোলন পর্যন্ত গড়াল কেন? যতদূর মনে পড়ে, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম জাতীয় সংসদে একবার কোটা সংস্কারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। একই সঙ্গে সরকারকে আহবান জানিয়েছিলেন কোটা সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্যে। তার বক্তব্যের পরে সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রী বিষয়টি আমলে নিয়েছিলেন বলে আমাদের জানা নেই। তার মানে বিষয়টি তবে কি সংসদেও উপেক্ষিত হয়েছিল?
সাধারণ শিক্ষার্থীরা শাহবাগে প্রতিদিন অবস্থান নিয়ে দৃশ্যত নিরীহ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যতদূর ধারণা করা যায়, সরকার সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাড়া প্রায় তাবৎ ছাত্রসংগঠন এই আন্দোলনের পক্ষে কৌশলগত সমর্থন দিয়ে গেছে এবং তলে তলে সংগঠিত হতে সাহায্য করেছে। পত্রিকায় কোটার পক্ষে-বিপক্ষে লেখালেখি হলেও, সংস্কারের পক্ষে ছিলেন প্রায় সকলেই।
শিক্ষার্থীরা যখন প্রতিপক্ষ
আন্দোলন চলছিল। পাশাপাশি আদালতেও বিষয়টি বিচারাধীন ছিল। পরে যদিও অবস্থা বেগতিক দেখে সরকারই উদ্যোগ নিয়ে আদালতকে শুনানি এগিয়ে আনতে অনুরোধ করেছিল। এই পদক্ষেপ নিতে সরকার কেন বিলম্ব করল? আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার কোনোরকম যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা কেন করল না?
গ্রামেগঞ্জে একটি প্রবাদ বহুল প্রচলিত, পচা শামুকেও পা কাটে। প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দলের মাঝে কেন এই দূরদৃষ্টি অনুপস্থিত? সেই আত্মজিজ্ঞাসা ক্ষমতাসীনদের জন্যে যেমন বাঞ্জনীয়, তেমনি অন্যদের কার কোথায় দায়, তা চিহ্নিত করা কার্যকর গণতান্ত্রিক চর্চারই অংশ।
সরকারের নানা পর্যায় থেকে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন। একজনের কথার সঙ্গে আরেকজনের কথার সমন্বয় সবসময় থাকেনি। একই বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী কথা বলেছেন। সবাই আদালতের দোহাই দিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে এমন কাউকে কি দেখা গেছে, সময় থাকতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে কথা বলতে পেরেছেন?
এমনকি সংবাদমাধ্যমে একাধিক লেখা ছাপা হয়েছে, সরকার কেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানাচ্ছে? এই প্রশ্নটিও সরকারের পক্ষ থেকে আমলে নেওয়া হয়নি। এই সুযোগে সরকারবিরোধী নানা পক্ষ নিরবে নিভৃতে এই আন্দোলনে একাট্টা হয়েছে। এরকম আভাস সাধারণ নাগরিকরা পেয়ে থাকলে, ক্ষমতার ভেতরের লোকজন কেন পেলেন না? এটা কিসের আলামত?
কর্মী-সমর্থকদের কথা বাদই দিলাম, ক্ষমতাসীনদের পক্ষে এত এত সংগঠন, কমিটি, নেতা, উপনেতা, পাতিনেতারা করলেনটা কী? গোয়েন্দা ব্যর্থতার প্রসঙ্গও কি সামনে আসবে না?