প্রয়োজন সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা

যুগান্তর একেএম শাহনাওয়াজ প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১১:২২

আমাদের দুর্ভাগ্য, সুস্থ ধারার রাজনীতির সংকটে ভুগছে এ দেশ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আওয়ামী লীগ প্রায় দেড় দশক রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, সহায়সম্পদ, স্বজন হারিয়েছি, জীবন নিয়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি গ্রাম থেকে গ্রামে। আত্মত্যাগ করে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, আর যারা জীবনবাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন, তারা সব আমাদেরই স্বজন ছিলেন। স্বাধীনতার উষালগ্নে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের বাড়িতে এসে আমার কিশোর দেহ-মন মুষড়ে পড়েছিল। তিন পুরুষের সম্পদে গড়া বিশাল সাজানো বাড়ি ছাইয়ের গাদায় মুখ থুবড়ে পড়ে কঙ্কাল হয়ে গিয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী ও বিহারিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বর্বর সেনারা সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। তবুও হতাশ হতে দেখিনি অভিভাবকদের। মেনে নিয়েছিলেন। ভেবেছেন, মুক্তিযুদ্ধে এটুকু ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়।


বিধ্বস্ত দেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। দৃঢ়তার সঙ্গে হাল ধরেছিলেন। কিন্তু সুযোগসন্ধানীরা সেই কঠিন বাস্তবতা বিবেচনায় না এনে বঙ্গবন্ধুকে ব্যর্থ বানানোর চেষ্টা করেছে বারবার। ঘোলাটে অবস্থা সৃষ্টি করে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সেই সময়ের বাস্তবতায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। আর এর সুযোগ নিয়েছিল অপশক্তি। এ সুযোগে সুবিধাভোগী হয়ে ক্ষমতার মসনদে এলেন জিয়াউর রহমান। আমি বিশ্বাস করি, এ প্রজন্মের মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা সেসব অতীতের খোঁজ রাখেন। দুর্ভাগ্য এই, রাজনীতিতে বিভিন্ন পক্ষকেই দেশপ্রেমের বদলে ক্ষমতাপ্রেমেই মত্ত থাকতে দেখেছি আমরা ।


পনেরো বছরের শাসনকালে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য অনেক; দেশকে অনেকটা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তারা। কিন্তু মানুষের মনে স্বস্তি দিতে পেরেছেন কি? দলটি যেখানে জনসমর্থনের সূচক অনেক উপরে নিতে পারত, সেখানে দিনে দিনে নিুগামী হচ্ছে। নানা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠে নামল। আমাদের মনে হয়েছে, এটা খুব সরল দাবির একটি আন্দোলন। প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও সরকারপক্ষ কোনো দলীয় ব্যানার ছাড়া একটি সংগঠিত ছাত্র আন্দেলনকে পাত্তাই দিল না। ১০ জুলাই কোটা আন্দোলনসংক্রান্ত আমার একটি কলাম যুগান্তরের সম্পাদকীয় পাতায় ছাপা হয়েছে। এখন আমার মনে হচ্ছে, অভিজাত নেতারা এ অভাজনদের বিশ্লেষণের প্রতি যদি সামান্য মনোযোগ দিতেন, তবুও কিছু লাভ হতো। আন্দোলন দাবানলের মতো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর আমাদের ধারণা ছিল, মাঠের রাজনীতিতে অভিজ্ঞ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে সহজেই সমস্যাটি মিটিয়ে ফেলবেন। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি তখন। অনেকের মনে হয়েছে, এর পেছনে দুটো কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, বিরোধীদলীয় চ্যালেঞ্জ না থাকায় অনেকদিন থেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের আচরণে-কথায় হামবড়া ভাব প্রকাশ পাচ্ছিল। দ্বিতীয়ত, ছাত্র আন্দোলন দীর্ঘায়িত করা সরকারেরই ইচ্ছা ছিল কি না, এটাও অনেকের প্রশ্ন। কারণ সরকারের ছত্রছায়ার অনেক বড় বড় রাঘববোয়াল পাহাড়সমান দুর্নীতি করে ধরা পড়ছিল। এতে সরকারের ভাবমূর্তির বেশ ক্ষতি হচ্ছিল। তাই হয়তো প্রয়োজন ছিল মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো। যাই হোক, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি এবং সরকারের পদক্ষেপের মধ্যে দূরত্ব বিশেষ ছিল না। শুধু দায়িত্বশীলদের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ধীরগতি হঠাৎ সবকিছু অগ্নিগর্ভ করে দিল। আদালত সরকারকে সমস্যা সমাধানের সুযোগ দিয়েছিলেন। সে সুযোগ গ্রহণ করে সরকারপক্ষ সংকটের ইতি টানতে পারত। কিন্তু সরকার অযথা পানি ঘোলা করে অবশেষে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের দাবি বাস্তবায়নের পক্ষে পরিপত্র জারি করল। অবশ্য এ প্রাপ্তির জন্য অনেক দুঃখজনক ঘটনা দেখতে হয়েছে। অনেকের রক্ত ঝরেছে। অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। সবকিছুর পরও দাবি বাস্তবায়িত হওয়ায় আমি আন্দোলনকারী সব শিক্ষার্থীকে ধন্যবাদ জানাই।


পাশাপাশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও তাদের সমন্বয়কদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেব, দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্যও আহ্বান জানাব। কারণ কার দায় কতটা, এ হিসাব দেশের বড় সংকটে করতে নেই। প্রয়োজন আগে সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করা। ইতোমধ্যে অনেক মূল্যবান জীবন ঝরে গেছে। অনেকে হাসপাতালে জীবন নিয়ে যুদ্ধ করছে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। এ সন্ত্রাসের দায় শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো পক্ষই চাপাচ্ছে না। সরকারপক্ষ বলছে, আন্দোলনের উত্তাল পরিস্থিতির সুযোগ জামায়াত, বিএনপি ও জঙ্গিরা নিয়েছে। তবে আমরা সব প্রমাণ পাওয়ার পর এ ব্যাপারে নিশ্চিত হব। অবশ্য ধ্বংসযজ্ঞের নমুনা দেখে ২০১৩-১৪ এবং ২০২৩-এর ২৮ অক্টোবরের অরাজকতার কথা মনে পড়ে যায়। যেখানে একইভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল বিএনপি-জামায়াত।


কোটা সংস্কারের দাবি বাস্তবায়িত হলেও এখনো অস্বস্তি রয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এটিও ঠিক, আন্দোলনের সূত্রেই কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। এর ফল হিসাবেই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময় আট দফা দাবি উত্থাপন করেছে। এসব দাবি যে যৌক্তিক নয়, তা বলছি না। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রমতো এসব দাবি চলমান আন্দোলনে জুড়ে দেওয়া ঠিক নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে স্বাভাবিক অবস্থায় আগে ফিরতে হবে। অতঃপর দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন করার সুযোগ তো আছেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও