কোনো সমাজই অহেতুক সহিংস হয়ে ওঠে না

www.ajkerpatrika.com আলতাফ পারভেজ প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:২৭

আলতাফ পারভেজ লেখক ও গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর। ডাকসুর নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী: ইতিহাসের পুনঃপাঠ, বার্মা: জাতিগত সংঘাতের সাত দশক, শ্রীলঙ্কার তামিল ইলম, গ্রামসি ও তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা প্রভৃতি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বই। সম্প্রতি দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই সহিংস পরিস্থিতি কেন ও কীভাবে তৈরি হলো এবং তা থেকে কীভাবে উত্তরণ পাওয়া যাবে—সেসব বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে।


আমরা ভাবতাম, একটা গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি। আসলে কি কখনো আমাদের দেশ গণতন্ত্র দ্বারা শাসিত হয়েছে?


আলতাফ পারভেজ: গণতন্ত্র কোনো একটি উপাদান দিয়ে গঠিত নয়। এর কোনো ধরাবাঁধা পরিসরও নেই। সমাজ ও রাষ্ট্রে কী কী উপাদান থাকলে তাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক সমাজ বলা হবে, তার সীমারেখা বেশ বড়। তবে নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের ন্যূনতম কিছু উপাদান বা সূচক আছে। বিশ্বজুড়ে সেই ন্যূনতম সাধারণ উপাদানগুলো দিয়েই বিভিন্ন জনপদের গণতান্ত্রিক অবস্থা পরিমাপ করা হয়।যেমন কোথাও বিভিন্ন আদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ আছে কি না, সংবাদপত্রে সংবাদ ছাপানো ও মতামত প্রকাশের ভয়হীন পরিবেশ আছে কি না, মানুষ শাসকদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে নির্বিঘ্নে বাসাবাড়িতে থাকতে পারে কি না, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ হতে পারে কি না ইত্যাদি হলো গণতন্ত্রের ন্যূনতম বিষয়। আমাদের দেশে এসব ছিল না, এমন নয়। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তো আমরা দেখেছি এ দেশে। ডিজিটাল অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইনের আগে, সন্ত্রাস দমন আইনের আগে, বিশেষ ক্ষমতা আইনের আগে নিশ্চয়ই এখনকার মতো পরিবেশ ছিল না। অন্তত আমার কথা বলতে পারি, জীবনের শুরুতে এমন অনেক ঐতিহাসিক বিষয়-আশয়ে লিখেছি, গবেষণা করেছি, এখন আর সে রকম লেখার কাজ করার সাহস পাই না। সাহসের এই ঘাটতি তো পরিবেশ-সৃষ্ট। লেখক স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করে না। 


জাতি আজ দুদিকে বিভক্ত হয়ে গেছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে গ্রাহ্যই করে না। সহিংস হয়ে উঠেছে। এর প্রতিকার কী?


আলতাফ পারভেজ: জাতি দুই ভাগ হয়ে গেছে কথাটা সত্য। তবে কীভাবে দুই ভাগ হলো এবং সেই দুই ভাগে কারা কারা আছে, সেটা দেখার বিষয় হলো গুরুত্বপূর্ণ; অর্থাৎ ভাগের মানদণ্ডটা হলো গুরুত্বপূর্ণ।


যেমন আমরা যদি শেয়ারবাজারকে একটা মানদণ্ড ধরি, তাহলে যারা শেয়ারবাজার থেকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে এবং যারা সেখানে সর্বস্ব খুইয়েছে, এরা দুই ভাগে পড়ে যাওয়া মানুষ। এখন কেউ যদি বলে এই দুই ভাগের মানুষই তো বাঙালি—তাদের মিলেমিশে শান্তিতে থাকা উচিত, তাহলে সেটা কিন্তু বাজার লুণ্ঠনকারীদের পক্ষে যাবে।


পুরো অর্থনীতি মিলিয়ে এ রকম মোটাদাগের দুটি শ্রেণি আছে এখন। একদল নির্বিঘ্নে টাকা পাচার করতে পারছে, সিন্ডিকেট বানিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে, সামান্য বেতনের চাকরি করেও হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারছে, আরেক দল অসহায়ের মতো সেসবের দর্শক-শ্রোতা হয়ে আছে।


আবার উপরিকাঠামোর রাজনীতি যদি দেখি, সেখানেও অবশ্যই দুটি পক্ষ আছে। তাদের মাঝে যে দ্বন্দ্ব ও বৈরিতা দেখছি, তার কারণ সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী ব্যবস্থার সংকট। কোনো দেশের সমাজে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যদি দেখে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা থাকে, শান্তিতে মতামত ব্যক্ত করা যাচ্ছে, তাহলেই কেবল স্বাস্থ্যকর একটা রাজনৈতিক পরিবেশ আশা করা যায় সেখানে। কোনো সমাজই অহেতুক সহিংস হয়ে ওঠে না। সহিংসতার কারণ না খুঁজে শান্তিবাদী হয়ে ওঠাও একটা বোকা বোকা ব্যাপার। সমাজে সহিংসতার কারণ দূর না করে আহাজারি করে আমরা ইতিবাচক কোথাও পৌঁছাতে পারব না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও