কোটা সংস্কার আন্দোলন কোন পথে যাচ্ছে

প্রথম আলো আলী রীয়াজ প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২৪, ১৬:২০

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ এবং বিরাজমান ইস্যুতে সরকারের অনমনীয় মনোভাবের কারণে গত কয়েক দিনে কমপক্ষে সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সামনের দিনগুলোতে কী ঘটবে, তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কোন পথে অগ্রসর হবে, সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়।


পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণ যে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে পারেনি, সেটা সহজেই লক্ষণীয়, আন্দোলনকারীরা তাঁদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করেন। রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশজুড়ে অনেক জায়গায় আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।


শিক্ষার্থীরা যখন প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছিলেন, সেই সময়ে এবং গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে যা বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তার বাইরে কিছুই বলা হয়নি—আদালতের মাধ্যমে সমাধান না আসা পর্যন্ত সরকারের কিছু করার নেই। আগেও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, একইভাবে এখনো এই কথা বলা যায় যে সরকার এ কথাগুলোই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে বলতে চাইছে না কেন? আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে সরকার উদ্যোগী হয়ে আইনের সংস্কার করেছে এমন উদাহরণ আছে। ফলে নির্বাহী বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের পথ আগেও ছিল, এখনো আছে।


এর জন্য আদালতের অপেক্ষা বাধ্যতামূলক নয়। তদুপরি আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করার কথা কেন রোববার রাতে এবং সোমবার সারা দিন ছাত্রলীগ কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য হলো না? তাঁরা কেন প্রধানমন্ত্রীর রোববার রাতের বক্তব্য অগ্রাহ্য করলেন কিংবা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন সোমবার ছাত্রলীগ জবাব দিতে প্রস্তুত বলে কার্যত নির্দেশ প্রদান করলেন, সেটাও বিবেচ্য।


প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, ‘ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।’ এই আশাবাদকে সরকার-সমর্থকদের কেউ কেউ ‘ইঙ্গিত’ বলে বর্ণনা করছেন, যা সব বিবেচনায়ই উদ্বেগের বিষয়।


গত কয়েক দিনে সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে শক্তি প্রয়োগের বাইরে আর কিছুই দেখা যায় না। সম্ভবত রংপুরে আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি ছোড়ার ভঙ্গির মধ্যেই সরকারের কৌশল প্রতিভাত হয়েছে। আগের যেকোনো বিক্ষোভের ঘটনার সময়—বিরোধী দলের ডাকা সমাবেশ কিংবা শিশু-কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যা-ই হোক—যা হয়েছে, দেখা গেছে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে কিংবা তাঁদের জ্ঞাতসারে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি নিক্ষেপ করছে এমন ব্যক্তি, যার পরিচয় খুঁজে বের করতে হয়।


সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিস্তল নিয়ে হামলায় অংশ নেওয়া যুবক হাসান মোল্লাই সরকারের রাজনৈতিক কৌশল। এই কৌশলের আসল কথা হচ্ছে বল প্রয়োগ করে দমিয়ে দেওয়া। এভাবে সাময়িক সাফল্য অর্জনের ইতিহাস আছে। কিন্তু জনগণের মধ্যে ভয়ের বিস্তার ঘটানোর এই চেষ্টা একসময় ভেঙে পড়ে। এর কিছু লক্ষণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের টিকে থাকার ক্ষমতা, তাঁদের দেওয়া স্লোগানের মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।


ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।’ তার মানে সামনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে বা সরকার তেমন মনে করছে। শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়াভিত্তিক আন্দোলন কেন ৭৫ বছর ধরে সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে টিকে থাকা দল আওয়ামী লীগের জন্য অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করতে পারে, সেটা কি ক্ষমতাসীনেরা বুঝতে পারছেন? এ ধরনের বক্তব্য যে ইতিমধ্যে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতিকে আরও বেশি সংঘাতময় করবে, সেটা যেকোনো ব্যক্তিই বুঝতে পারেন। এগুলো এই ধারণাই দেয় যে সমস্যার সমাধান নয়, সরকারের লক্ষ্য সম্ভবত শিক্ষার্থীদের শায়েস্তা করা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও