প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর ও ভারসাম্যের কূটনীতি

যুগান্তর ড. দেলোয়ার হোসেন প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৪২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের দুই সপ্তাহের মধ্যেই চীন সফর করে এসেছেন। এ সফর বাংলাদেশের কূটনীতির ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলের রাজনীতি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন সফর ব্যাপক তাৎপর্য বহন করে। এ দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে বিরাজ করছে ‘কৌশলগত অংশীদারত্বের’ সম্পর্ক, যা ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল।


এবারের সফরটি নিয়ে অনেক ধরনের বিশ্লেষণ হচ্ছে। বিশেষ করে এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ কী পেয়েছে, কী পায়নি-এসব প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ চলছে। তবে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে যে কোনো সফরে দুই পক্ষেরই অর্জনের জায়গা থাকে। কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি থাকে; অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন লক্ষ করা যায়।


এ সফরেও আমরা লক্ষ করেছি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। দুই দেশ অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের ‘কৌশলগত অংশীদারত্বের’ সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব’কে গুরুত্ব দিয়ে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় এ শীর্ষ বৈঠকে প্রত্যক্ষ করা যায়।


বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে এ সফরের বিশেষ অর্জন হিসাবে কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। প্রথমত, বাংলাদেশ ও চীন ২১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। দ্বিতীয়ত, সাতটি প্রকল্প ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করা হয়। তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ও চীন একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষর করে, যা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ২৭ দফা সংবলিত এ যৌথ ঘোষণাটি দু’দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ একটি রূপরেখা বলা যেতে পারে। চতুর্থত, চীন বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং আর্থিক খাতে বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য চীন অর্থনৈতিক সহায়তা করতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে চীন কয়েকভাবে সহায়তা করতে পারে। যেমন-অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, স্বল্প সুদে ঋণ এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঋণ। ঘোষণা এসেছে, চীন বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেবে। পঞ্চমত, চীনের বেসরকারি খাত থেকে বিনিয়োগের জন্য সফররত বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ১৬টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ বিষয়গুলোকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে দৃশ্যমান অর্জন হিসাবে বিবেচনা করা যায়।


যৌথ ঘোষণাপত্র এবং সমঝোতা স্মারকগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও চীন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক, কূটনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থগুলো বিবেচনা করেই সম্পর্কের গভীরতা ও পরিধি বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়েছে। এ সফরে বাংলাদেশ ও চীন দ্বিপাক্ষিক একটি ভবিষ্যৎমুখী ভাবনা উপস্থাপন করেছে, যার প্রতিফলন ঘটেছে যৌথ ঘোষণার মধ্যে।


এ যৌথ ঘোষণার ভেতরে সমঝোতা স্মারক কিংবা ঘোষণাপত্রের বিষয়গুলো যেমন আছে, পাশাপাশি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও চীন আরও কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে এবং তাদের সম্পর্ককে কিভাবে শক্তিশালী করবে সেই ইঙ্গিতও দৃশ্যমান। সার্বিকভাবে যৌথ ঘোষণার আলোকে এবং অন্যান্য অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি বিষয় সামনে অবতারণা করা যায়।


এ সফরের কূটনৈতিক অর্জনের জায়গা থেকে কয়েকটি বিষয় দৃশ্যমান। প্রথমত, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা চলমান রাখা এবং আরও নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, চীন বাংলাদেশকে ব্রিকস ও সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সদস্যপদ প্রাপ্তির ব্যাপারে সহায়তা করবে। তৃতীয়ত, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়ে দু’দেশের অভিন্ন অবস্থান রয়েছে, যার প্রতিফলন এখানে দেখতে পাই।


বিশেষ করে দুই দেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার বিষয়টিতে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। দুই দেশ মৌলিক স্বার্থগুলোর ব্যাপারে পরস্পর সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা, উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, এক্ষেত্রে ২০৪১-এর মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের যে স্বপ্ন সেটি পূরণ করা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এবং নিজস্ব উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করাকে চীন দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় দেখা যায়, পরাশক্তি ও বিশ্ব শক্তিগুলো তাদের কূটনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপসহ এক ধরনের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা ক্রমাগত বজায় রেখেছে। সেই জায়গা থেকে এ ঘোষণাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পাশাপাশি বাংলাদেশও তাইওয়ান ইস্যুতে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি সমর্থন বজায় রাখবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও