উত্তরার নিষেধাজ্ঞা ও এফডিসির সংকট: সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিপর্যয়

বিডি নিউজ ২৪ অপু মেহেদী প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৫, ২২:০০

মাস কয়েক আগেও বাংলাদেশের ছোট ও বড় পর্দার পরিচিত মুখ অভিনেত্রী মৌ শিখার জীবন ছিল কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ। মাসে প্রায় ২০ দিন তিনি শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতেন। অভিনয়ই ছিল তার জীবনের আনন্দ ও জীবিকার উৎস। কিন্তু এখন তার ওই উজ্জ্বল দিনগুলোতে মেঘের ছায়া। আড়াই মাস ধরে কাজের অভাব তাকে বিমর্ষ করেছে। এমনকি তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “নিজেকে অভিনেত্রী ভাবতে লজ্জা লাগছে”। এই কথাগুলো শুধু একজন শিল্পীর বেদনা নয়, বরং পুরো বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বর্তমান সংকটের প্রতিফলন।


পঁচিশ বছর ধরে নিয়মিত কাজ করে যাওয়া একজন শিল্পী কেন হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়বেন? একই সম্মানী, একই পরিমাণ কাজ করেও কেন তার পেশাগত অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে? নাটক ও সিনেমার প্রযোজনা হঠাৎ কেন এত কমে গেল? এর কারণ কি শুধু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, নাকি আরও গভীর কিছু?


এই শিল্পীর গল্প আমাদের সামনে নিয়ে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—উত্তরায় শুটিং হাউজের ওপর স্থানীয় কল্যাণ সমিতির আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। সম্প্রতি উত্তরা কল্যাণ সমিতি সেক্টর চারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে শুটিং হাউজ পরিচালনা ‘নীতিমালার পরিপন্থি’ এবং তা এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ‘ব্যাহত’ করছে।


চিঠিতে আরও বলা হয়, শুটিং চলাকালে রাস্তায় জনসমাগম তৈরি হচ্ছে, যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে এবং আশপাশের বাসিন্দারা ‘বিরক্তি ও নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগছেন। এ ছাড়া ‘পরিবেশের শান্তি ও সুনিশ্চিত নিরাপত্তা’ ব্যাহত হচ্ছে (পরে অবশ্য শর্ত মেনে সমঝোতা হয়েছে)। লাবণী ৪, লাবণী ৫ ও আপনঘর ২-এর মতো পরিচিত শুটিং হাউজগুলোতে কার্যক্রম বন্ধের খবরে নাট্য ও চলচ্চিত্র জগতের মানুষের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, নাগরিক স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চার অগ্রগতিও অপরিহার্য।



শুটিং ইউনিটের উপস্থিতি, ক্যামেরা-লাইটের ভিড়, রাতে শব্দদূষণ এবং যানজট—এগুলো বাস্তব অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মধ্যরাতে ওই এলাকার রাস্তায় মশাল মিছিলের দৃশ্যের শুটিং। এটি নিঃসন্দেহে আবাসিক এলাকার নাগরিক অধিকার খর্বের উদাহরণ। অথচ ২০২২ সালে শুটিং হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করেছিল। বারবার নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট পক্ষ এই নিয়ম মানেনি। ফলে স্থানীয় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে।


শিল্পী সমাজের পক্ষ থেকে নিয়ম ভঙ্গ করে শুটিং করা দায়িত্বহীনতার পরিচয়, তেমনি কর্তৃপক্ষের পূর্ব আলোচনা ছাড়া শিল্পমাধ্যমের একটি বড় শাখাকে বন্ধের মুখে ঠেলে দেওয়াও সঠিক নয়। শিল্পচর্চাকে বাধাগ্রস্ত করলে বা এমন কাজ করলে যাতে বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে আমাদের জাতির সাংস্কৃতিক ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


শুধু উত্তরা নয়, নিকেতন, গুলশান, মগবাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে শুটিং হাউজ রয়েছে। এগুলো পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে উঠেছে। আবাসিক এলাকায় এভাবে শিল্পের কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে চলা সমীচীন নয়। এর জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত, আধুনিক ও বাণিজ্যিক শুটিং জোন, যেখানে শিল্পীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন এবং নাগরিক অধিকার খর্ব হবে না। ভারতের মুম্বাই ও কলকাতায় এমন জোন রয়েছে, যেখানে শিল্পীরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন, নাগরিকদের ভোগান্তি হয় না এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম চলে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও এমন পরিকল্পিত জোন রয়েছে।


এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ সম্মিলিত উদ্যোগ—শিল্পী, নির্মাতা, প্রশাসন ও নাগরিকদের মধ্যে উন্মুক্ত সংলাপ। নাগরিকদের জীবনযাত্রার স্বস্তি রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শুটিং বন্ধ করে সাংস্কৃতিক চর্চা দমিয়ে রাখা গ্রহণযোগ্য নয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনা, শৃঙ্খলা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান জরুরি—যেখানে নাগরিক প্রশাসন ও শিল্পী সকল পক্ষই দায়িত্বশীল থাকবেন।


তবে শুধু দায়িত্বশীলতা মৌ শিখার মতো শিল্পীদের কর্মব্যস্ত রাখতে পারবে না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নাটক ও সিনেমা শিল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনাকে পরিকল্পিতভাবে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এফডিসি) দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনার শিকার। ২০২০ সালে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেছিলেন, “এফডিসি তো গার্বেজ”। কেন এমন হলো? কারা দায়ী? সম্প্রতি চিত্রনায়িকা নূতন বলেছেন, “এফডিসিকে এখন ভূতুড়ে বাড়ি মনে হয়”।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও