পানি দূষণ : একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম চ্যালেঞ্জ
পানি হলো হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগ যা জীবকোষের জন্য অপরিহার্য। এজন্য মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার আগে প্রথমে সেই জায়গায় পানির অস্তিত্ব খোঁজেন। মনে করা হয় যে, যদি পানি না থাকে, তাহলে সেইখানে প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব।
পানি একটি সর্বজনীন দ্রাবক এবং প্রাণীর জৈবিক প্রক্রিয়ার জন্য রক্ত এবং পাচক রসের মতো জলীয় দ্রবণের ওপর নির্ভরশীল। পানি আমাদের শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়াসহ স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রস্রাব, ঘাম এবং মলত্যাগের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য নির্গমনে সাহায্য করে। শরীরকে সচল রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় প্রচুর পানির দরকার।
পানি রক্তে ও কোষে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। দেহে পানির অভাব ঘটলে পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনির সমস্যাসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। পুষ্টিবিদ মার্গারেট ম্যাকউইলিয়ামস এবং ফ্রেডেরিক স্টেয়ারের মতে, প্রাপ্ত বয়স্করা দিনে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করে। এর মধ্যে ফল এবং সবজিতে থাকা পানি, ক্যাফেইন এবং কোমল পানীয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
সার্বিক বিবেচনায় পানি মানবজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপহার বা সম্পদ। গৃহস্থালি, পরিবহন, কৃষি, শিল্প, বিনোদন এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারসহ অনেক দৈনন্দিন ব্যবহার রয়েছে এই অমূল্য সম্পদের। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এই অমূল্য সম্পদ নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পানি দূষণ একটি বড় সমস্যা। প্রকট হচ্ছে সুপেয় পানির সমস্যা।
অনেকেই মনে করেন, পানি নিয়ে হয়তো তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হতে পারে। পানি দূষণ বিভিন্ন ধরনের অজৈব ও জৈবযৌগ এবং অণুজীবের কারণে হতে পারে। কিছু পর্যবেক্ষক অনুমান করেছেন যে, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা পানিজনিত রোগের সম্মুখীন হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৭ সালে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, অনিরাপদ পানি সরবরাহের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৪ বিলিয়ন মানুষ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ১.৮ বিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এটি অশনি সংকেত, যা নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে।
পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় ৭১ ভাগ পানি হলেও সুপেয় পানির পরিমাণ খুবই কম। আমরা সমুদ্রের পানিতে মনের আনন্দে অবগাহন করলেও সেই পানির এক ফোঁটাও পান করতে পারি না। নদীবিধৌত বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটা সেই অবস্থায় পৌঁছেছে। ঢাকা শহর ঘিরে যে কয়েকটি নদী রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ এবং বালু নদী। এই জীবন্ত নদীগুলো আমরা জেনেশুনে মেরে ফেলেছি।
পরিবেশ বাঁচাও (পবা) আন্দোলনের একটি বিশেষজ্ঞ দল ২০১৬ সালে ৪টি নদীর দূষণ পর্যবেক্ষণে দেখিয়েছে যে, অধিকাংশ স্থানের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায়। যেটি ভালো বার্তা বহন করে না। এর মূল কারণ হলো এসব নদীর তীরে গড়ে উঠেছে চামড়া এবং টেক্সটাইলসহ নানা ধরনের শিল্প কলকারখানা। এই কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত অবাধে বর্জ্য পানি সরাসরি নদীতে পড়ছে।
বর্তমান সরকার এর গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রতিটি শিল্পকারখানায় বাধ্যতামূলক বর্জ্য শোধন ব্যবস্থা বা ইটিপি রাখার প্রস্তাব করেছে বলে জেনেছি। তবে কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা বিবেচ্য। একই সাথে ঢাকা শহরের গৃহস্থালি থেকে নির্গত বর্জ্য পানি শোধনের জন্য নেই পর্যাপ্ত গৃহস্থালি বর্জ্য পানি শোধনাগার।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পানি দূষণ
- পানি শোধনাগার