একজন আবেদ আলীর উত্থান ও পতন

সমকাল ইফতেখারুল ইসলাম প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৫

গত কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমে একটি আলোকচিত্র নজর কাড়ছে। ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি দুই দিকে হাত ছড়িয়ে বসে আছেন, পেছনে গাছের ঝোপঝাড়; আর তাঁর শরীরজুড়ে লাল, নীল, হলুদ ও সাদা রঙের তোতা পাখি। তিনি আমাদের আবেদ আলী, যাকে গ্রামবাসী খুব শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। এর কারণ তিনি গ্রামের হতদরিদ্রদের টাকা বিলান। সেই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েও দেন। 


প্রভাবশালীদের আশপাশে থেকে ক্ষমতার চর্চা, বাকচাতুরীর মধ্য দিয়ে সহজে বোকা বানানো, অর্থ বিলানো ও ধর্মের লেবাস দিয়ে জনসাধারণের চোখ ফাঁকি দেওয়া; সবই আবেদ আলীর চরিত্রে সুস্পষ্ট। এ কারণে আবেদ আলী এক ধরনের প্রতীকে পরিণত। 


ছবিতে আবেদ আলী দু’দিকে হাত প্রসারিত করে ক্ষমতার দাপটকেই প্রতীকায়িত করছেন। তাঁর পেছনের ঝোপঝাড় আমাদের প্রশাসনিক অজস্র অব্যবস্থাপনা এবং শরীরজুড়ে তোতা পাখি অর্থ ও ক্ষমতার নির্লজ্জ মিলনের প্রতীক। শুধু তাই নয়; আবেদ আলীর ধর্মীয় লেবাসও এখানে জনসাধারণের সমীহ আদায়ের অন্যতম হাতিয়ার বটে। ধর্মের লেবাস নিয়ে তিনি জনসাধারণের ‘সম্মতি উৎপাদন’-এর পথ বেছে নিয়েছেন। 


আবেদ আলীর কেরামতিও বেশ নজর কাড়ে। গ্রামের মসজিদ কিংবা সমাবেশে তিনি তোতা পাখির মতো কথা বলেন। দীর্ঘদিনের অধ্যবসায় ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তিনি এত টাকা-পয়সা করেছেন বলে বক্তৃতা দেন। হাটবাজার, গাড়ি, বিমান– সবখানে তিনি নামাজ পড়েন। সমুদ্রসৈকতের ঝিরিঝিরি হাওয়ায় বিস্তীর্ণ বালুরাশিতেও নামাজ পড়তে ভোলেন না তিনি। নিজের এলাকায় একটা মসজিদও বানিয়ে দিয়েছেন আমাদের এই আবেদ আলী। 


আগেও আমরা আবেদ আলীকে দেখেছি প্রখ্যাত লেখক আহমদ ছফা তাঁর ‘একজন আলি কেনানের উত্থান পতন’ (প্রকাশকাল: ১৯৮৮) উপন্যাসে। ছফা সেখানে এক আলি কেনানের কেচ্ছা তুলে ধরেছেন, যিনি ছিলেন ষাটের দশকের শেষদিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খানের বাসার কাজের লোক। সেই সুবাদে আলি কেনান প্রভূত ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হয়েছিলেন। 


আমাদের আবেদ আলীও আসলে তেমনই, যিনি বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে বেশ ক্ষমতার অধিকারী হন। এই প্রতিষ্ঠানের ওপরেই নির্ভর করে রাষ্ট্রের দায়িত্বভার কারা নেবেন। সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশপাশে ঘুরঘুর করে আবেদ আলী বেশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। আবার এ প্রভাব তিনি অবৈধ টাকা উপার্জনে কাজে লাগান।


সত্য কথা বলতে কি, আবেদ আলী এদেশে অবৈধ পথে টাকা কামানোর প্রতীকে পরিণত। তিনি জানেন, কীভাবে প্রভাবশালীদের তৈলমর্দন করতে হয়; কীভাবে গ্রামের সরল মানুষদের চোখ ফাঁকি দিতে হয়।


এসব কাজের উত্তরাধিকারী হলেন আবেদ আলীর সুযোগ্য সন্তান। যাকে বলে বাপকা বেটা! সুচতুর সন্তান কখনও মসজিদের মিম্বরের সামনে কিংবা গ্রামের লোকদের সহযোগিতা ও ধর্মবাণী শুনিয়ে কাছে টেনে নেন। ধবধবে পাঞ্জাবি পরে নজর কাড়েন। দুখী মানুষদের সুখ-দুঃখের খবর নেন। দু’জনেই দেদার টাকা বিলান; হতদরিদ্রদের পাশে আছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট দেন। এতে তাদের প্রতিপত্তি বাড়ে। 


আবেদ আলী বেশ সুকৌশলী। চারপাশে দেখছেন, ক্ষমতায় যেতে হলে টাকা লাগে। টাকা বানানোর সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হলো রাজনীতি। তাই তিনি বেশ জোরেশোরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এবার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবেও প্রচারণা চালিয়েছিলেন। মাঝপথে হোঁচট খেয়েছেন বটে; নিশ্চয় কোনোভাবে তিনি দাঁড়িয়ে যাবেন। তিনি এই দীর্ঘ পথচলায় ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছেন যে, এই সমাজে টাকার জোরে সবকিছুই কিনে ফেলা যায়। আইন-আদালত, প্রশাসন, গণসম্মতি, মান-মর্যাদা, মেধা– কোনটা নয়?


আহমদ ছফা তাঁর উপন্যাসে আলি কেনানের উত্থানের পাশাপাশি তার পতনও দেখিয়েছিলেন। আমাদের আবেদ আলীও ধরা পড়েছেন। কিন্তু যারা তার ওপরে থাকেন, রাষ্ট্র তাদের আঙুলের ইশারা ছাড়া চলে না। তারা একে অপরকে সহযোগিতা করেন। তারাই এখন দেশের সবকিছু দেখভাল করেন করেন। আবার তারাই কালো টাকা সাদা করার লাইসেন্স পেয়েছেন। এ কারণে দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপানোর পরও স্যারদের ধরা সম্ভব হয় না। স্যারদের এসব কাজের বিশেষ সহযোগীও আবেদ আলীর মতো ব্যক্তিবর্গ। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও