কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি

সমকাল সফিক ইসলাম প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২১

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সবচাইতে স্মরণীয় ঘটনা এবং মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান–এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মুক্তিযোদ্ধারা চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, চাকরিতে কোটা পদ্ধতির প্রবর্তন সেই চেতনাবিরোধী। বিষয়টি খোলাসা করা দরকার। 


বস্তুত মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছে, সেই প্রশ্নের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিহিত। মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অপশাসন ও নিবর্তনমূলক আচরণের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বহুবিধ নিবর্তনমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছিল। কিন্তু ১৯৭০ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। 



১৯৭০ সালের পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী পাকিস্তানের শাসন পরিচালনার ভার সংখ্যাগরীষ্ঠ দলেরই পাওয়ার কথা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হয়নি। তারা প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী পদ দুটি পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য সংরক্ষিত রেখেছিল। অনেকটা অলিখিত কোটা ব্যবস্থা। আসলে রাষ্ট্রের উচ্চস্তরের প্রায় সব পদই পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল অলিখিতভাবে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বুঝতে পারল যতদিন এই কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকবে ততদিন তাদের ভাগ্যের উন্নতি হবে না। সংগত কারণেই ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে এবং রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।


আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। কাজেই স্বাধীন বাংলাদেশে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে, সব ধরনের বৈষম্য নিরসন হবে, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি নিশ্চিত হবে– এমনটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির নিয়োগে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা রয়েছে। 


প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা কোটার কথা বলা যাক। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনি এই কোটার আওতাভুক্ত। যে কোনো বিচারেই মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে বাংলাদেশে যা প্রচলিত, তা অগ্রহণযোগ্য ও অবিবেচনাপ্রসূত। 


প্রথমত, পিতার অপরাধে যেমন পুত্রকে শাস্তি দেওয়া যায় না, পিতার সম্মানও পুত্রকে দেওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, সন্তান সর্বদাই পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত নাও হতে পারে। পৃথিবীতে এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে পিতা ও পুত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন দর্শনের অনুসারী। বাংলাদেশেও এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি পাওয়া যাবে। 


এমনকি অনেক মুক্তিযোদ্ধার কথা আমরা জানি, যারা পরবর্তীকালে সমাজ ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে দণ্ডিত হয়েছেন। কারও কারও মৃত্যুদণ্ডও হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ও তাদের দণ্ডমুক্ত রাখতে পারেনি। ফলে মুক্তিযুদ্ধ বা দেশপ্রেম কোনো এককালীন ঘটনা নয়, এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন সত্তা। কাজেই একজন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেই তাঁকেও রাষ্ট্রের বড় পদে আসীন করার যুক্তি হয় না, যদি তাঁর সংশ্লিষ্ট পদে যথেষ্ট যোগ্যতা ও মেধা না থাকে। 


অনেকে নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা কিংবা তথাকথিত উপজাতি কোটার কথা বলে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে সব কোটাই রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে নিয়োজিত কর্মচারীদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। যেমন ফরেন সার্ভিস। অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিজ রাষ্ট্রের স্বার্থ উদ্ধারই তাদের প্রধান দায়িত্ব। এমন পদে মেধাবী, যোগ্য ও চৌকস ব্যক্তির বদলে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া মানে হলো, রাষ্ট্রের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া। একইভাবে পুলিশ, প্রশাসন কিংবা অন্য যে কোনো পেশায় দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে কম যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হলে তাঁর পক্ষে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও