বিদ্যুৎ বিভাগের অবস্থা কাজির গরুর মতো!
কথায় বলে কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। আমাদের দেশের বিদ্যুৎ বিভাগের অবস্থাও তাই। কারণ, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে চাহিদা অপেক্ষা বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হলেও বিদ্যুতের অভাবে দেশের মানুষের যাপিতজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মফস্বলের মানুষকে দিনে-রাতে অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
আজ প্রায় এক মাস হলো আমি আমার নিজ জেলা পাবনা শহরে অবস্থান করছি। শহরের পৌর এলাকার পশ্চিমাংশে আমার বাড়ি। অথচ এ এলাকাতেই দিনে-রাতে ৮/১০ বার বিদ্যুৎ চলে যায় এবং কখনো এক ঘণ্টা, আবার কখনো এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর বিদ্যুৎ বাবু ফেরত আসেন। এ অবস্থায় কুরবানির মাংসসহ ফ্রিজে রক্ষিত অনেকের খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে অনেকেই স্থানীয় নেসকো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। তারা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, তাদের করার কিছু নেই। কোনো সময় লোডশেডিংয়ের কথা বলে, কখনো বা বিদ্যুৎ লাইন মেরামতের কথা বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার সরাসরি নেসকোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও দেখেছেন, তাতেও কোনো সুফল হয়নি। এ অবস্থায় যাপিতজীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠাসহ ফ্রিজে রক্ষিত মাছ-মাংস নষ্ট হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে ব্যবহার্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি বিনষ্ট হওয়া ইত্যাদি কারণে কেউ কেউ নেসকো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন অতি সাধারণ মানুষ একদিন আমার কাছে এসে অভিযোগের সুরে বললেন, সারা দিন খাটাখাটনির পর সন্ধ্যারাতে চারটে ভাত খেতে বসেছি, ঠিক সেই সময় বিদ্যুৎ চলে গেল, আবার রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার পর মাঝরাতে গরমের চোটে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি ঘামে সারা শরীর ভিজে গেছে; কারণ, কখন যেন বিদ্যুৎ চলে গেছে। আবার অনেকেই অভিযোগ করছেন, প্রায় প্রতিদিনই মাগরিবের নামাজের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনাটি একটি নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এভাবেই মফস্বল এলাকায় দিন-রাত ঘণ্টায় ঘণ্টায় এমনকি আধাঘণ্টা, পনের মিনিট পরপরও বিদ্যুৎ চলে যায়। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের মনেও এখন যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো, ‘উৎপাদিত এত বিদ্যুৎ যাচ্ছে কোথায়? কে বা কারাই বা এত বিদ্যুৎ খেয়ে ফেলছেন। নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে যেসব অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে?’
উল্লেখ্য, সাধারণ মানুষের এসব প্রশ্ন অত্যন্ত সাদামাটা হলেও তার উত্তর কিন্তু অতটা সহজ নয়। কারণ, মাসে মাসে, চাঁদে চাঁদে বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে গ্রাহকের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করার পরও সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কাজকর্ম দিনের পর দিন প্রশ্নের পর প্রশ্ন সৃষ্টি করছে। দিনকয়েক আগে গবেষণা সংস্থা সিপিডির আলোচনাতেও বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতির কথা উঠে এসেছে, কেউ কেউ বিদ্যুৎ বিভাগের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেছেন, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও বলেছেন, তাদের কলকারখানায় ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না। এখন প্রশ্ন হলো, এসব কথা, এসব তথ্য সঠিক কিনা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিদ্যুৎ উৎপাদন
- বিদ্যুৎ সরবরাহ