আয়বৈষম্য নিরসনে ‘কেরালা মডেল’ অনুসরণ করুন

সমকাল ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৫

জিডিপি, জিএনআই প্রবৃদ্ধিসহ নানাবিধ অর্থনৈতিক সূচক তিন দশক ধরে সন্দেহাতীতভাবে জানান দিয়ে চলেছে– বাংলাদেশের অর্থনীতি অনুন্নয়ন ও পরনির্ভরতার ফাঁদ থেকে মুক্ত হয়ে টেকসই উন্নয়নের পথে। কিন্তু মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি যদি দেশে আয় বণ্টনে বৈষম্যও বাড়তে থাকে, তাহলে এর সুফল সমাজের উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর কাছে পুঞ্জীভূত হওয়ার প্রবণতা শক্তিশালী হতে থাকে।


এর ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ প্রবৃদ্ধির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আশির দশক থেকেই আয় ও সম্পদ বৈষম্য বাড়তে বাড়তে এখন বাংলাদেশ ‘উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশে’ পরিণত হওয়ার পথে। কোনো অর্থনীতির জিনি (বা গিনি) সহগ যখন শূন্য দশমিক ৫-এর কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন নীতিনির্ধারকদের বোঝার কথা– আয়বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের খানা আয়-ব্যয় জরিপে জিনি সহগ নির্ধারিত হয়েছিল শূন্য দশমিক ৪৮৩। ২০২২ সালে সেটা পৌঁছে গেছে শূন্য দশমিক ৪৯৯-এ।
ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য সমস্যা মোকাবিলা করা দুরূহ, কিন্তু অসম্ভব নয়। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছাই এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন। কারণ আয় ও সম্পদ পুনর্বণ্টন খুবই কঠিন রাজনৈতিক নীতি-পরিবর্তন ছাড়া অর্জন করা যায় না। এ ক্ষেত্রে ‘কেরালা মডেল’ বাংলাদেশের জন্য অনুসরণীয় ভূমিকা পালন করতে পারে। 


অর্থনীতির বাইরেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ‘কেরালা মডেল’ সত্তর দশক থেকেই বিশ্বে আলোচিত। ক্রয়ক্ষমতার সাম্য (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) ভিত্তিতে মাথাপিছু জিডিপি, সাক্ষরতার হার, শিক্ষার সব পর্যায়ে অভিগম্যতার হার এবং জনগণের গড় প্রত্যাশিত আয়ুর ভিত্তিতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত মানব উন্নয়ন সূচকের স্কোরে কেরালা ভারতের সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে এইচডিআই প্রথম প্রকাশিত হওয়ার বছর ১৯৯০ সাল থেকেই। প্রথম থেকেই অনেক উন্নত দেশের চেয়ে কেরালার র‍্যাঙ্কিং ছিল উঁচুতে। শিশুমৃত্যুহার, মাতৃমৃত্যুহার, জন্মহার, মৃত্যুহার, মোট প্রজনন হার, জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির হার, সব পর্যায়ের শিক্ষিতের হার, মৌল স্বাস্থ্যসেবায় অভিগম্যতা, ভর্তুকি দামে খাদ্য-রেশন ও ফিডিং ব্যবস্থা, চিকিৎসক-জনসংখ্যা অনুপাত– এ ধরনের তাবৎ সামাজিক সূচকেও কেরালা অনেক উন্নত দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। 


আড়াই দশক আগেই কেরালার জনসংখ্যা প্রতিস্থাপন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সেখানকার জনসাধারণ প্রায় শতভাগ মৌল স্বাস্থ্য সুবিধা ও চিকিৎসা সুবিধার আওতায় এসেছে। রাজ্যটিতে ২ হাজার ৭০০-এর বেশি সরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল রয়েছে। এক লাখ জনসংখ্যার জন্য ৩০০ হাসপাতাল শয্যা রয়েছে, যা ভারতে সর্বোচ্চ। কেরালার নিম্ন-আয়ের মানুষ বিপুল ভর্তুকি-দামে রেশনের চাল কিনছেন। সব প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী স্কুল ফিডিংয়ের আওতায় এসেছে। সব প্রবীণ কৃষক মাসিক পেনশন পান। সেখানকার গ্রামীণ পরিবারের ৮৫ শতাংশ পাইপলাইনের পানি সরবরাহের আওতায় এসেছে। আরও যা চমকপ্রদ, মধ্যপ্রাচ্যে উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ মানবপুঁজি রপ্তানির ক্ষেত্রে কেরালা ভারতে চ্যাম্পিয়ন। 


বাংলাদেশে যেমন, তেমন কেরালাতেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রবাসীদের ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যদিও শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে সম্ভবত বাংলাদেশের বিপরীত। কারণ শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাও কেরালার আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। গত কয়েকটি সাধারণ নির্বাচনে দেখা গেছে, জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতার দিক থেকেও কেরালা ভারতের পথিকৃৎ।


বস্তুত জনগণের মাথাপিছু জিডিপি কম হলেই যে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান দারিদ্র্যপীড়িত হবে– বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের প্রতীচ্যের উন্নয়ন-তাত্ত্বিকদের এই মাথাপিছু আয়কেন্দ্রিক ধারণাকে দুটো উন্নয়ন মডেল সবার আগে ভ্রান্ত প্রমাণিত করেছিল। এর একটি সমাজতান্ত্রিক কিউবা, অপরটি ভারতের কেরালা। বিশেষত মাথাপিছু জিডিপি বিভিন্ন দেশের মানবকল্যাণ তুলনার জন্য উপযুক্ত নয়– এই ধারণার ক্ল্যাসিক উদাহরণ কেরালা। মাথাপিছু জিডিপি বেশি না হলেও যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতের মতো একটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশেও ঈর্ষণীয় জীবনযাপন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়– কেরালা সেটা দেখিয়েছে। রাজ্যটি তৃতীয় বিশ্বে এ ধরনের সফলতম নজির সৃষ্টি করেছে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও