প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ও ‘বিকল্প বাজেট’

যুগান্তর মুঈদ রহমান প্রকাশিত: ০৯ জুন ২০২৪, ০৯:৩৮

গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবাকারে উপস্থাপন করেন। এ বাজেটের ওপর আগামী তিন সপ্তাহ জনপ্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন এবং এ মাসের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্তভাবে বাজেটটি অনুমোদন পাওয়ার পর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা; এর মধ্যে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা; আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সাধারণত ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। এবারে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে, আর বাদবাকিটা ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে, যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাবদ আসবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। সরকার সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে থাকবে ঋণের সুদাসল পরিশোধে। সরকারকে এ বছর প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে কেবল ঋণের সুদাসল পরিশোধে; যা মোট বাজেটের ১৪ শতাংশেরও বেশি।


কেমন হলো এবারের বাজেট? এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন, যা প্রতিটি বাজেট প্রস্তাবের পরপরই করা হয়ে থাকে। এর উত্তর আপনি-আমি দিতে কিছুটা সময় নিলেও সরকারি দল ও বিরোধী দল বিবৃতি দিতে কালক্ষেপণ করে না; এবং এ বিবৃতির ধরনটিও গতানুগতিক-দায়সারা-ফরমায়েশি। সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হবে এ বাজেট যুগান্তকারী ও গণমুখী; অন্যদিকে বিরোধী দল বলবে এ বাজেট গরিবমারা ও হরিলুটের বাজেট। প্রকৃত সত্য হলো, আমাদের শাসনব্যবস্থা যেমন, আমাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যেমন, আমাদের শাসকগোষ্ঠী যাদের দ্বারা প্রভাবিত, বাজেটটি তেমন। এতে নতুনত্বের কিছু নেই। তারপরও দু-চারটি কথা বলতে হয়। সাধারণত প্রতিবছরই বাজেটের আকার পূর্বতন বছরের তুলনায় ১২-১৩ শতাংশ বড় হয়। এবারের বাজেট গত বছরের তুলনায় সাড়ে চার শতাংশের মতো বড় হয়েছে, তাই প্রকৃত অর্থে বলা যায়, ছোট হয়েছে। অনেকে এটাকে ভালো বলছেন এ কারণে যে, এর দ্বারা আমাদের অর্থনৈতিক সংকটকে মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে সমস্যা রয়েই গেল। এবারও ব্যাংকগুলোতে সরকারি ঋণের চাপ থাকবে, যার নেতিবাচক প্রভাব বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর পড়বে। এবারে এনবিআরকে গত বছরের তুলনায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে। যদি বিনিয়োগ না বাড়ে, শিল্পকারখানা না বাড়ে, ব্যবসা না বাড়ে, তাহলে অতিরিক্ত করের সংস্থান করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সবই ব্যর্থ ও অকার্যকর। সেজন্য বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা দরকার ছিল। এ ছাড়া দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, ব্যাংক খাতে সংস্কার, রিজার্ভ বাড়ানো, ডলার সংকট নিরসন, পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা ও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি থেকে টাকা আদায়ে অগ্রাধিকার প্রয়োজন। এসব কিছু প্রস্তাবিত বাজেটে কাঙ্ক্ষিত হারে দেখা যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, দুর্নীতি, অপচয়, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ না করলে সংকট সামাল দেওয়া যাবে না।’ সুতরাং, এ বাজেট আমাদের আশার আলো দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এবারে অর্থনীতি সমিতি প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটের প্রসঙ্গে আসি।


২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ‘বিকল্প বাজেট’ প্রস্তাব করে আসছে। সাধারণত সংসদে জাতীয় বাজেট প্রস্তাবনার আগে আগে অর্থনীতি সমিতি এ আয়োজন করে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত ৩ জুন ঢাকায় অর্থনীতি সমিতি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ‘বিকল্প বাজেট’ উপস্থাপন করে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম এ বিকল্প বাজেট উপস্থাপন করেন। এ সময় সাংবাদিক ও সমিতির সদস্য ছাড়াও জুম মিটিংরুম, ফেসবুক, ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৬৪টি জেলা, ১৩৫টি উপজেলা, ৪৫টি ইউনিয়ন এবং বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং, অর্থনীতি সমিতির আয়োজনটি অনেকখানি বড় পরিসরে সম্পন্ন করা হয়েছিল।


জাতীয় বাজেটের তুলনায় অর্থনীতি সমিতির বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রম। এ বাজেট গতানুগতিক নয়। যদিও সাধারণ অর্থে আমরা বাজেট বলতে এক বছরের সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব বুঝে থাকি, কিন্তু প্রকৃত পরিধিটা অনেকখানি প্রসারিত। আপনি কোন কোন খাতে ব্যয় করবেন এবং সেই ব্যয় নির্বাহের জন্য কোন কোন খাতকে করের আওতায় আনবেন তার একটা অর্থনৈতিক দর্শনভিত্তি থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ ব্যয়ের ক্ষেত্রে এবং কর আহরণের ক্ষেত্রে কোন শ্রেণি-পেশার মানুষের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করবেন তার একটা প্রতিফলন বাজেটে থাকতে হয়, যা আমাদের সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটগুলোতে চোখে পড়ে না। সে কারণে আমরা বিগত পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের প্রস্তাবিত ও অনুমোদিত বাজেটকে ‘গতানুগতিক বাজেটের’ বাইরে বিবেচনা করতে পারি না। অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেটের’ একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। সমিতির উপস্থাপিত বিকল্প বাজেটের মূল লক্ষ্য হলো, ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তথা ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে একটি আলোকিত-শক্তিশালী-টেকসই মধ্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে রূপান্তরিত করা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও