ওষুধ খাত পেতেই পারে বিশেষ মনোযোগ
ওষুধের দাম যে দফায় দফায় বাড়ছে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তবে বেদনার্ত হওয়ার কারণ রয়েছে। বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই এ জন্য যে, ‘অত্যাবশ্যকীয়’ বাদে আর সব ওষুধের দাম স্থির করছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোই। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা অনুমোদন করছে মাত্র। কোম্পানির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, তাদের চাহিদামতো দাম বাড়াতে দিচ্ছে না প্রশাসন।
এ কথা সত্য হলে বলতে হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একটা চেষ্টা অন্তত আছে! নিবন্ধের শুরুতে বেদনার্ত হওয়ার কথাও তুলেছিলাম। সেটা এ জন্য যে, দেশে অনেক দিন ধরেই চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ অবস্থায় জরুরি পণ্য ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়লে নিম্ন ও স্থির আয়ের সিংহভাগ মানুষের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি হয়, তা সহজেই অনুমেয়। একই ওষুধের দাম অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিকবার বাড়ার খবরও রয়েছে। অতীতে ওষুধের দাম বাড়লেও এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বোধ হয় আর যেতে হয়নি।
দেশে এমন রোগী তো বহু, যাদের নিয়মিতভাবে কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। মাঝেমধ্যে যেসব ওষুধ কিনতে হয়, শুধু সেগুলোর দাম বাড়লেও কথা ছিল। ‘তালিকাভুক্ত’ ওষুধের দামও কিন্তু মাঝে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়। তার একটা যুক্তি ছিল যে, দীর্ঘদিন এগুলোর দাম বাড়ানো হয়নি। যে কোম্পানিগুলো সরকার-নির্ধারিত দামে এসব ওষুধ বানিয়ে বাজারে ছাড়ে, তাদের নাকি পোষাচ্ছিল না।
বেসরকারি কোম্পানির কাছে ওষুধ তো একটা ‘বাণিজ্যিক পণ্য’ই। এগুলো বিক্রি করে তাদের ন্যূনতম মুনাফা অন্তত করতে হবে। দাম বাড়ানোর সেই প্রক্রিয়া নিয়ে তাই বেশি প্রশ্ন ওঠেনি, যদিও বহুলভাবে ব্যবহৃত কিছু ওষুধের দাম এক ধাক্কায় অনেক বাড়ানো হয়েছিল।
তবে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এরপরও দফায় দফায় অন্যান্য ওষুধের দাম বাড়া অব্যাহত থাকায়। এটা কোথায় গিয়ে থামবে, তা কেউ বলতে পারছে না! খুচরা দোকানিরাও বলছেন, এভাবে ওষুধের দাম বাড়তে তারা কখনো দেখেননি। ক্রেতারা দোকানে এসে দেখছেন, চেনা ওষুধের দাম নীরবে বেড়ে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তখন তাঁরা হয়তো কম ওষুধ বা একটা-দুইটা কম কিনে ঘরে ফিরছেন।
একই গ্রুপের দামে কম ওষুধ অনেকে কিনছেন এই অবস্থায়। ইন্টারনেটে আজকাল এ বিষয়ে সহায়তা মেলে। খুচরা বিক্রেতাদেরও কেউ কেউ ক্রেতাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিচ্ছেন নিশ্চয়। ওষুধের বাজারে তাঁদের একটা ভূমিকা তো রয়েছেই। এ কারণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের প্রস্তুত করার কথাও বলা হয়। আর ‘মডেল ফার্মেসি’তে তো একজন ফার্মাসিস্ট নিয়োজিত রাখার শর্তই রয়েছে। দেশে এমন ফার্মেসি গড়ে উঠেছে অবশ্য কমই। এর সিংহভাগে যথাযথভাবে ওষুধ সংরক্ষিতও থাকছে না—বিশেষত টানা তাপপ্রবাহ চলাকালে। সেটা অবশ্য আরেক প্রসঙ্গ।
এখন দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ যদি ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায় স্বাস্থ্যসেবায় ঢিল দিয়ে দেয়, সেটা উদ্বেগজনক। এ ক্ষেত্রে মানুষ যা ব্যয় করে, তার সিংহভাগই যায় ওষুধ কেনায়। একই সময়ে ডাক্তার দেখানো এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচও তাদের বেড়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ওষুধ
- ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর