![](https://media.priyo.com/img/500x/https://cdn.ajkerpatrica.net/contents/cache/images/720x0x1/uploads/media/2024/05/26/6c357899b719c4e9ee5d261c2a9b06c3-66529644e6920.jpg)
ক্ষম ধনী ব্যক্তিদের করজালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে
এম এম আকাশ অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক তিনি। তিনি ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তিনি। বাজেটের আগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে।
বাজেট পেশের আগে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হলেও, সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হয় না। এটা কতটুকু যৌক্তিক?
এম এম আকাশ: একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাজেট সব মানুষকে স্পর্শ করার কথা। এ জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করাই গণতান্ত্রিক
রীতি হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবস্থাটাই হলো কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক। সুতরাং যত দিন পর্যন্ত বাজেট প্রণয়নের নীতিমালার পরিবর্তন করা না হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত এটা গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক বাজেট হবে না। এ জন্য একসময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জেলা বাজেটের কথা বলেছিলেন। সেটা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। বেসরকারি একটি সংস্থাও কতগুলো দাবি তুলেছিল, সেটাও কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন সম্প্রতি দাবি করেছেন, বাজেট দুই ভাগে ভাগ করে অর্ধেক উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দিতে হবে। এভাবে যদি বাজেট করা হয়, তাহলে জেলা, উপজেলাসহ সর্বত্র বাজেট নিয়ে আলোচনা বিস্তৃত হবে এবং অংশগ্রহণমূলক বাজেট প্রণীত হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখলেও সাধারণ জনগণের স্বার্থ দেখে কী?
এম এম আকাশ: এটা নির্ভর করে সরকার কাদের দ্বারা গঠিত, মন্ত্রিপরিষদ, সংসদ সংসদ এবং জাতীয় সংসদে কারা প্রভাব বিস্তার করে আছেন, সরকারের মূল নীতিগুলো নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কারা বেশি ভূমিকা ও প্রভাব রাখেন— ইত্যাদির ওপর। আমরা জানি, বাজেট প্রণয়নের জন্য যে সংসদে আলোচনা হয়, সেই সংসদের ৬২ শতাংশের বেশি হলেন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর লোক। আমরা জানি, ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে নিজেদের অর্থ ও ক্ষমতার দাপট দেখানোর ক্ষেত্রে পরিণত করেছেন। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন সেখানে কমই ঘটে। সে কারণে বাজেটে ক্ষমতাকাঠামোর প্রভাবটাই বড় হয়ে ওঠে। আর ক্ষমতাকাঠামোয় এখন অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ রাজনীতিবিদ এবং অসৎ আমলাদের সম্মিলন ঘটেছে। বাজেটে তাঁদের প্রভাবের কারণে জনগণের প্রভাব কম দেখা যায়।
এবারের বাজেটে আপনি কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
এম এম আকাশ: এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। কারণ ভ্যাট যদি আরও বসানো হয় এবং ভর্তুকি যদি কমানো হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। পাশাপাশি সুদের হার ও ডলারের বিনিময় হার বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। কিন্তু এগুলো আবার না করলে আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে না। আর সেটা না করা গেলে আইএমএফের ঋণও পাওয়া যাবে না। সুতরাং একদিকে সম্পদের ঘাটতি তৈরি হবে, অন্যদিকে অপ্রিয় সংস্কার না করে উপায় থাকবে না। এসব করলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এ রকম ত্রিশঙ্কু অবস্থার মধ্যে বাজেট পড়ে গেছে।
এবারও ঋণ করে বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে। এটা কতটা যৌক্তিক?
এম এম আকাশ: সরকারের যুক্তি হলো, তারা তো জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি ঋণ করছে না। যেহেতু ৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি হচ্ছে না, সেহেতু তাদের মতে সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঋণের মূল পরিমাণ তো ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। আগে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার মতো ছিল, সেটা এখন ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো হয়ে যাচ্ছে। বাজেটের বিরাট একটা অংশ ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। ফলে আসলে শেষ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়িত হবে না। এই পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করতে গেলে প্রাইভেট সেক্টর থেকে ঋণ পাবে না। আর প্রাইভেট সেক্টর থেকে ঋণ না পেলে বাজেটে যেসব প্রবৃদ্ধির টার্গেট ছিল, সেই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না।