প্রথমে অপমানবিষয়ক কৌতুকটা বলে নিই। আপনারা জানেন। তবুও আজকের দিনে এটাই প্রাসঙ্গিক। গ্রামের এক লোক মাতব্বরকে নালিশ করছে, ওরা আমাকে হাটের মধ্যে জুতা দিয়ে পিটিয়েছে, কানে ধরে ওঠবস করিয়েছে, আবার বলেছে, সামনের দিনে আমাকে অপমান করবে! মাতব্বর সাব, মারধর সহ্য করা যায়, অপমান তো সহ্য করতে পারব না।
দুই কান কাটার কৌতুকটাও আপনারা জানেন। যে লোকের বাম কান কাটা, সে রাস্তার বাম দিকে ঘেঁষে হাঁটে। যাতে কেউ তার বাম কান দেখতে না পায়। যার ডান কান কাটা, সে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হাঁটে।
আর যার দুই কান কাটা, সে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটে।
শহীদুল্লা কায়সারের সংশপ্তক–এ একটা চরিত্র ছিল কান কাটা রমজান। আর শিল্পী ভ্যান গঘ নাকি তাঁর প্রেমিকাকে নিজের কান কেটে উপহার দিয়েছিলেন।
ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের একটা প্রকাশনায় দেখতে পাচ্ছি, ১৮৮৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে ভ্যান গঘ নিজের কান কাটেন। পরিচ্ছন্নতা-কর্মী এক তরুণীকে কানটা দিয়েছিলেন শিল্পী। সেই মেয়েটি, তখন বয়স ১৮, ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
আমাদের অবশ্য কান কাটা যায় না। কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সম্পর্কে একটা গল্প প্রচলিত আছে। তাঁর পায়ে ক্যানসার হয়েছিল। ডাক্তাররা সেই পা কেটে ফেলেছিলেন। একজন তরুণ লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন।
কাঁদছ কেন? ইলিয়াসের প্রশ্ন।
আপনার পা নেই।
আমার একটা পা নেই, তাই তুমি কাঁদছ, তোমার যে মাথা নেই, সে জন্য তো আমি কাঁদছি না—আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নাকি বলেছিলেন।
চারদিকে বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে। সংবাদমাধ্যমে আসছে। সেসব নিয়ে আমরা বিচলিত বোধ করছি না। কারণ, আমাদের দুই কানই কাটা।
আপনারা জানেন, আমি ‘গুড্ডুবুড়া’ লিখি। একটা কমিক গোল্লাছুটে বের হয়। গত সপ্তাহে ভেবেছিলাম এই রকম লিখব।
গুড্ডুবুড়া বলছে: বাংলাদেশ আমেরিকাকে হারাবে, বাংলাদেশ আমেরিকাকে হারাবে!
: কী বলছ গুড্ডুবুড়া, বাংলাদেশ অর্থে–বিত্তে–জ্ঞানে–অস্ত্রে কোনো কিছুতেই আমেরিকাকে হারাতে পারবে না।
: পারবে। ক্রিকেট খেলায়।
পরে ভাবলাম, দলটার নাম বাংলাদেশ। আর আমেরিকার দলে নিশ্চয়ই ভারতীয়, পাকিস্তানি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড থেকে আগত ইমিগ্র্যান্টরা খেলবে। বাংলাদেশ হারতেও পারে। থাক...
যা শঙ্কা করেছিলাম, তাই হলো। তবুও লজ্জা পাচ্ছি না। খেলায় হারজিত থাকবেই।
তবে সামনের দিকে যারা তাকাতে বলবে, বলবে, পেছনে তাকাবেন না, তাদের থেকে সাবধান। তারা সামনে পাঠিয়ে দিয়ে পিঠে ছুরি মারতে পারে।