সংশোধিত শিক্ষাক্রম কি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য যথেষ্ট?

যুগান্তর এম এ আজিজ প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৪, ১১:৫০

শিক্ষাকে সময়োপযোগী করতে শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে; কিন্তু তারপরও কি এ শিক্ষাক্রম চলমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা জ্ঞানভিত্তিক বিজ্ঞানমনস্ক স্বয়ংক্রিয়তার যুগের জন্য উপযোগী? বর্তমান স্বয়ংক্রিয়তা বা অটোমেশনের যুগে দেশের অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞানমনস্ক জনশক্তিই যেহেতু প্রধান ভরসা, তাই এ শিক্ষাক্রম কতটা পেছনে তা মূল্যায়ন করে একে যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি। কারণ, বর্তমান যুগের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরীক্ষাক্রমের মাধ্যমে যে ‘সনদপ্রাপ্ত শিক্ষিত’ জনগোষ্ঠী তৈরি হবে, তাদের অধিকাংশই স্বয়ংক্রিয়তার যুগে অনাবশ্যক হয়ে পড়বে।


বর্তমান শিক্ষাক্রম চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগের সঙ্গে কতটুকু উপযোগী জানার চেষ্টা করি। নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। এর ওপরের শ্রেণিতে পরীক্ষার মূল্যায়ন শিখনকালীন ধারাবাহিক পদ্ধতিতে হবে। অর্থাৎ বিষয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বছর ধরে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ, প্রকল্পভিত্তিক শিখনচর্চা, খেলাধুলা, গ্রুপ ওয়ার্ক, কুইজ ও পোস্টার প্রদর্শনীসহ নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিয়ে তাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন।


চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিকবিজ্ঞান বিষয়ের ওপর ৬০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং সিলেবাস শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়নে থাকবে ৪০ শতাংশ। এর বাইরে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলায় শতভাগ মূল্যায়ন শিখনকালীন করা হবে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিকবিজ্ঞানের ওপর শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিখনকালীন শতভাগ মূল্যায়ন থাকছে। নবম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিকবিজ্ঞান বিষয়ের ওপর ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন ও শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ থাকবে। দশম শ্রেণিতে একই বিষয়গুলোতে সামষ্টিক মূল্যায়ন ৬৫ শতাংশ ও শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩৫ শতাংশ থাকবে। এ ছাড়া উভয় শ্রেণিতে জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ের শতভাগ মূল্যায়ন থাকবে। দশম শ্রেণি শেষে পাঠ্যসূচির ওপর পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি অনুষ্ঠিত হবে। এসএসসি পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হতে যাচ্ছে ৬৫ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ হবে ৩৫ শতাংশ।


এ শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে না; কিন্তু চলমান জ্ঞানভিত্তিক স্বয়ংক্রিয়তার বিশ্বে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি জনশক্তির বিকল্প হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশেও কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে রোবট ব্যবহারে শ্রমিকরা কর্মহীন হতে শুরু করেছে। এ ছাড়া আধা-অটোমেশন শিল্প তো আছেই। পর্যায়ক্রমে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কার বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবন-জীবিকার গতিপথ।


২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৮০০ কোটি। পরের ২০ বছরে বাড়বে আরও ১০০ কোটি। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে জন্মহার হ্রাস পাওয়ার কারণে এ সময়কালের মধ্যে বার্ধক্যে উপনীত হওয়া জনশক্তিকে প্রতিস্থাপন করার মতো পর্যাপ্তসংখ্যক তরুণ থাকবে না।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর জরিপ দেখিয়েছে পাঁচটি খাত; যেমন-উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, পরিবহণ, কৃষি এবং নির্মাণখাত জিডিপিতে ৬৭ শতাংশ অবদান রাখে। এছাড়া ‘প্রবাসী আয়’-এর পাশাপাশি উৎপাদন খাতের সিংহভাগ আসে ‘তৈরি পোশাকশিল্প’ থেকে। এ খাতগুলো শ্রমিকনির্ভর। বিবিএস-এর ৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত চূড়ান্ত জনসংখ্যা জরিপে দেখানো হয় দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। মোট জনসংখ্যার ৪২.৮৪ শতাংশ ১৫-৩৯ বছর বয়সি। শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সি ২৮.৮১ শতাংশ এবং চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের হার ২৮.৭১ শতাংশ। অর্থাৎ তরুণ শ্রেণির মোট জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ।


চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে এ তরুণ শ্রেণিই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশ। যেহেতু বাংলাদেশে আগামী ২০ বছরজুড়ে তরুণ জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে, তাই এ সময়ই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল ভোগ করার শ্রেষ্ঠ সময়। দেশে কর্মক্ষম জনশক্তি ৬৫.২৩ শতাংশ। তাই, দেশ এখন জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালের সুবিধাভোগ করছে। এরপর এ আশীর্বাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড না-ও থাকতে পারে। সুতরাং, এখনই দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে স্বয়ংক্রিয়তার অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উপযুক্ত জ্ঞানভিত্তিক বিজ্ঞানমনস্ক জনশক্তিতে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায়, দেশের অগ্রগতি ও জিডিপির চাকা না-ও ঘুরতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও