ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ উত্তেজনায় কে জিতল, কে হারল
সবাইকে বিস্মিত করে ইসরায়েলের প্রতিশোধপর্বটা ছিল সীমিত। গত শুক্রবার ইসফাহানের সামরিক ঘাঁটির কাছে ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে আকাশপথে যে হামলা চালানো হয়, ইরান সেটা ততটা পাত্তা দিতে নারাজ। বাইরে থেকে হামলার বিষয়টা তেহরান অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলি মুখপত্ররা আর সব বিষয়ে অনর্গল বাক্যবর্ষণ করে চললেও এ ঘটনায় অদ্ভুতভাবে নীরব। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, ঘটনাকে গুরুত্বহীন করে তুলতে দুই পক্ষের মধ্যে যেন একটা চুক্তি হয়েছে, যাতে ধীরে ধীরে উত্তেজনার পারদ এমনিতেই নিচে নেমে যায়।
এটিকে উনিশ শতকের সেই চোরাগোপ্তা কোনো এক ডুয়েল লড়াইয়ের মতো মনে হচ্ছে; যেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইংরেজ ব্রিটেনে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে তৃণভূমির মধ্যে পরস্পরের দিকে অবৈধভাবে পিস্তল তাক করেছে। ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশেরই মানমর্যাদা পরিপূর্ণভাবে রক্ষা করতে হবে, কিন্তু সেটা আবার করতে হবে জনগণের মধ্যে যেন আবার চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু না হয়, সেটা মাথায় রেখে।
দুই দেশই একে অন্যের দিকে সরাসরি হামলা করেছে। তাতে প্রতীকী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন তারা এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে খেলা শেষ, অন্তত এবারের মতো।
এটা যদি সত্যি (যদিও সম্ভাবনাটা সাময়িক সময়ের জন্য) হয়, তাহলে সেটা অনেক বড় স্বস্তির বিষয়। এ ঘটনা এই ইঙ্গিত দেয় যে সংযত হতে ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র চাপ (যুক্তরাজ্য ও অন্য দেশগুলোও তাতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে) কাজে এসেছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলে ইরানের অভূতপূর্ব ও বড় পরিসরে হামলার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি ‘জয়টাকে ধরে রাখার’ আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। বোঝা যাচ্ছে, এই বার্তার মর্মোদ্ধার সফলভাবেই করতে পেরেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতৃত্ব কখনোই কোনো বিষয়ে পুরোপুরি ঐকমত্য হতে পারে না।
অবশ্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডিএনএর মধ্যেই সংযমের বালাই নেই। সাবেক এই কমান্ডো ইরানের হামলার পর সহজাতভাবেই পাল্টা শক্তি দেখাতে চেয়েছিলেন। আর তাঁর কট্টর ডানপন্থী মিত্ররা যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল।
এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল যে মাপা পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে মানাতে পেরেছে। আর ইরানের ড্রোন ও মিসাইল হামলা থেকে ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সেটাও নেতানিয়াহুর পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- হামলা
- পাল্টা হামলা