ইউএনওর কাজ কি শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা
শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসন পরিচালিত একটি পার্কে টিকিট ছাড়া প্রবেশ করায় পাঁচ শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে? ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ আছে, এমন কোনো মানুষ এটা করতে পারেন না। তবে শরীয়তপুর সদর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাইন উদ্দিন সেই কাজই করেছেন।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যার পর পার্ক থেকে তাদের আটক করেন গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। পরে তাঁদের কান ধরে দাঁড় করানো হয়। সদর উপজেলা ইউএনওর নির্দেশ ও উপস্থিতিতে আটক শিশুদের এই শাস্তি দেওয়া হয়। শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন পার্কে আসা দর্শনার্থীরা। এসব ছবি ও ভিডিওতে ইউএনওকে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে ইউএনও মাইন উদ্দিন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তাঁর দাবি, শিশুদের কান ধরিয়ে রাখার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কয়েকটি শিশু দেয়াল টপকে পার্কে ঢুকেছিল। পাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তাদের ধরে এনেছেন। ওরা দাঁড়িয়ে ছিল, ভয়ে হয়তো কানে হাত দিয়েছে।
এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মাত্র। ভয়ে কানে হাত দেওয়া আর কান ধরিয়ে রাখা এক কথা নয়।
এখানেই ক্ষান্ত হননি ইউএনও। তিনি কান ধরা অবস্থায় শিশুদের উপদেশ দিয়ে বলেছেন, বিনা অনুমতিতে পার্কে ঢুকে তারা গর্হিত অপরাধ করেছে। এমন অপরাধ যেন তারা ভবিষ্যতে কখনো না করে।
পত্রিকার খবরে আরও জানা যায়, চার শিশুকে কানে হাত দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাদের বয়স ১০ থেকে ১৪ বছর। কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা কাঁদতে থাকে। যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে, তাদের কাছ থেকে পার্কে প্রবেশের টাকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যাদের বয়স ১৩ বছরের ওপরে, এমন দুজনকে আটকে রাখা হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে পার্ক বন্ধ করার সময় গ্রাম পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন ওই দুই শিশু তাদের চোখ এড়িয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে যায়।
ইউএনও দেয়াল টপকে পার্কে প্রবেশ করার মধ্যে অপরাধ দেখেছেন। কিন্তু শিশুদের অধিকারকে মূল্য দেননি। সরকারি পার্ক তো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। যদি সেই পার্কে যাওয়ার সামর্থ৵ শিশুদের না থাকে, রাষ্ট্রেরই উচিত তাদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। ঢাকার শিশুপার্ক তো আগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খুলে দেওয়া হতো সপ্তাহে এক দিন। এখন আর পার্কটি খোলা নেই। সংস্কারের নামে কয়েক বছর ধরে বন্ধ আছে।
একটি শিশু অভিযোগ করেছে, গার্ড তাঁকে দেয়াল থেকে ঠেলে পার্কের ভেতরে ফেলে দিয়েছেন। এখানে শিশুটির অপরাধ কোথায়? এই অভিযোগের পর ইউএনওর উচিত ছিল গার্ডকে শাস্তি দেওয়া। তিনি সেটি না করে হর্ষচিত্তে শিশুদের কান ধরার দৃশ্য অবলোকন করলেন এবং তাদের সৎ হওয়ার পরামর্শ দিলেন।
একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর নিশ্চয়ই জানা আছে, শিশুদের শাস্তি দেওয়া যায় না। এমনকি বিদ্যালয়গুলোতেও নির্দেশনা দেওয়া আছে, তাদের যেন শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া না হয়। ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের শাস্তি দেওয়া যায় না। অথচ ইউএনও এবং ওই পার্কের রক্ষীরা তাদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন!
- ট্যাগ:
- মতামত
- ইউএনও
- শাস্তি প্রসঙ্গ
- শিশু পার্ক
- বিনা টিকিট