বিরোধী দলবিহীন সংসদ ও রাজনীতি

www.ajkerpatrika.com চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৭

সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় বিরোধী দলের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ব্যবস্থায় সুনির্দিষ্ট বিরোধী দল সংসদের হৃৎপিণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ বিরোধী দল ছাড়া সংসদীয় পদ্ধতি কখনোই সফলভাবে কাজ করতে পারে না। বিরোধী দল ও সরকার সাইকেলের দুটি চাকার মতো। দুটি চাকা সচল হলে গণতন্ত্র সচল হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা বর্তমানে সার্কাসের সেই এক চাকার সাইকেলে পরিণত হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। বিএনপির বাইরে অন্যতম বৃহৎ দল জাতীয় পার্টি সরকারি দলের সঙ্গে আপসের ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তাদের অবস্থান ‘না ঘরকা না ঘাটকা’! দ্বাদশ নির্বাচনে তারা মাত্র ১১টি আসন লাভ করেছে। তাদের চেয়ে অনেক বেশি আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২টি আসন। এই পরিস্থিতিতে এবার সংসদে বিরোধী দল কে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


মাত্র ১১টি আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না। এ সংখ্যা দিয়ে বিরোধী দল গঠন বাংলাদেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রচলিত নিয়মের বাইরে। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে বিরোধী দল হিসেবে অফিশিয়ালি স্বীকৃতি পেতে হলে দলের আসনসংখ্যা ন্যূনতম ২৫ হতে হবে, যা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে নির্ধারিত হয়। এর কম হলে তারা বড়জোর পার্লামেন্টারি গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। কাজেই দ্বাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও অপ্রতিহত ক্ষমতা নিয়ে সরকার গঠন করলেও সংসদীয় ব্যবস্থার সংকট থেকেই যাচ্ছে।


অবশ্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রবণতা অনুযায়ী, বিরোধিতা বা সমালোচনাকে সহ্য করা হয় না। আমরা চাই কেবল সমর্থন, প্রশংসা আর আনুগত্য। সমালোচনা যত গঠনমূলক হোক না কেন, সেটা আমরা মানতে বা সহ্য করতে পারি না। ফলে আমাদের দেশে ‘সমালোচক’ তৈরি হয় না, তৈরি হয় স্তাবক আর শত্রু বা বিদ্বেষকারী। এই মনোভাবের কারণে বিরোধী দল মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। অবশ্য বিরোধী দলও আমাদের দেশে কেন জানি গঠনমূলক সমালোচনার পরিবর্তে কেবলই হিংস্রতা প্রদর্শন, প্রতিদ্বন্দ্বীকে গুঁড়িয়ে দেওয়া, ‘ধ্বংস হোক, নিপাত যাক’ টাইপের ধারণা পোষণ করে। ফলে আমাদের দেশে দুটি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে পরিণত হয় ঘোরতর শত্রুতে।


কার্যকর বিরোধী দলমুক্ত একটা ‘অনুগত সংসদীয় ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের বিরাট অবদান আছে। বিরোধী দল বিকশিত হোক, সংসদে এসে কথা বলুক, এটা ক্ষমতাকাঙ্ক্ষীরা চায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনেও বাধা দেওয়া হয়। বিরোধীদের ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করে রাখা হয়। এত সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বিরোধী দল তাই খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। অথচ গণতন্ত্রের চর্চায় বিরোধী দল থাকা অপরিহার্য। শুধু গণতন্ত্রের খাতিরেই নয়, যেকোনো বিবেচনাতেই বিরোধী দল বা সমালোচক প্রয়োজন। কেননা, একজন ব্যক্তি বা একটি দল সব সময় সব সিদ্ধান্ত সঠিক নিতে পারে না। তার সেই সিদ্ধান্ত ভুল না ঠিক, কোথায় গলদ, কোথায় সমস্যা—এগুলো আরেকজনের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে। বাইরের কেউ যদি একটা উদ্যোগ বা সিদ্ধান্তের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয়, ভিন্ন কোনো ভালো পথের সন্ধান দেয়, আখেরে সেটা সবার জন্যই লাভ। সে জন্যই ইংরেজিতে বলা হয় ‘ক্রিটিকস আর ইওর বেস্ট ফ্রেন্ডস’; অর্থাৎ সমালোচকেরা আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু।


কিন্তু আমরা সবাই ‘সবজান্তা শমশের’ হয়ে বসে আছি। আমরা নিজেরাই নিজেদের মত ও পথ সেরা বলে ধরে নিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে অটুট থাকি। তাই সমালোচনা ও বিরোধিতাকে আমরা শত্রুতা হিসেবে ধরে নিই। সবার চোখ ও কণ্ঠ বন্ধ করে দিয়ে কেবল নিজেরটাকে শ্রেয় মনে করে পথ চলি। তাই আমাদের দেশে বিরোধী দল কখনো শক্তিশালী হয় না। বিরোধীদের কণ্ঠস্বর কখনো উচ্চকিত হতে পারে না। 


আমাদের দেশে কয়েক দশকে যে যখন ক্ষমতায় আসীন হয়েছে, সেই বিরোধী দলের নাম-নিশানা ভুলিয়ে দেওয়ার মিশন নিয়েছে। প্রয়োজনমতো গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। বিরোধী দলমুক্ত দেশ গড়ার একটা অদৃশ্য অ্যাজেন্ডা ক্ষমতায় যাওয়া সব দলই বাস্তবায়ন করেছে। এই ব্যাধি রাজনীতিকদের মজ্জাগত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও