এই জয় কোনো ক্লাইমেক্স নয়
ঘটনাটা ঘটে গেল। লিও তলস্তয়ের আন্না কারেনিনা যারা পড়েছেন তারা জানেন, আট ভাগে বিভক্ত বিশাল উপন্যাসের দ্বিতীয় ভাগের একাদশ অধ্যায়ে ঘটনাটা ঘটে যায়। উপন্যাসের সূচনায় দেখা যায় মস্কোর অভিজাত স্টিফেন অবলোনস্কি আর তার কন্যার গৃহশিক্ষিকার মধ্যে গোপন প্রণয়ের কথা জানতে পেরে স্টিফেনের স্ত্রী ডলি ক্ষুব্ধ, চিন্তিত।
স্টিফেনের বোন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা কারেনিনার স্ত্রী আন্না সেন্ট পিটাসবার্গ থেকে মস্কো আসে ভাইয়ের কাছে—ভাই ও ভাইয়ের বৌয়ের মধ্যে সমঝোতা করে দেওয়ার চেষ্টায়। আন্নার সাথে পরিচয় হয় সেনা কর্মকর্তা কর্নেল ভ্রনস্কির সাথে—পরবর্তীতে যা প্রেমে রূপ নেয়। বিবাহিতা আন্নার সাথে ভ্রনস্কির এই প্রেম, প্রেমের বিস্তার ও পরিণতি এইসব নিয়েই এগিয়ে চলে বিশাল বিপুল এই উপন্যাস।
তারই দ্বিতীয় ভাগের একাদশ অধ্যায়ে এসে ঘটনাটা ঘটে যায়। তলস্তয়ের ভাষায়, ‘অবশেষে ব্যাপারটা ঘটে গেল। ভ্রনস্কি সারা বছর ধরে পুরোনো কামনার পরিবর্তে যে বাসনা পুষেছিল; যেটা মনে করা অসম্ভব বা ভীতিকর অথচ অপার্থিব এক পুলকের স্বপ্নের মতো, সেই ঘটনটা ঘটে গেল। আন্না কারেনিনা ও ভ্রনস্কি শারীরিকভাবে মিলিত হলো।’
আন্না কারেনিনা যখন পড়ি তখন আমি সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ যুবক। সেই অধ্যায়টা পড়ে আমার যেটা মনে হয়েছিল, হায় হায়। উপন্যাসের বড় অংশ এখনো বাকি, এর মধ্যেই ক্লাইমেক্স শেষ হয়ে গেল! বাকি উপন্যাস তাহলে অর্থহীন হয়ে গেল না? কিন্তু না, সেইটা তো হয়নি। সেই অনিবার্য ঘটনাটি প্রথমে মনে হয়েছিল বটে যে এইটাই কি না উপন্যাসের ক্লাইমেক্স, আসলে সেইটা কাহিনির একটা মোড় মাত্র—ক্লাইমেক্স মোটেই নয়।
বলতেই হবে যে হাবিবুল আউয়াল কমিশন আসলেই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এবং নিরপেক্ষতার সাথে এই নির্বাচনটি পরিচালনা করেছে। প্রায় ৪০ শতাংশের মতো ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে, জাল ভোটের ঘটনা খুবই কম ঘটেছে—জাল ভোট ধরা পড়ার পর কয়েকজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করে সেই রকম বড়সড় কোনো ঘটনা ঘটেনি।