আ.লীগ ও বিএনপির বৈরিতার ভেতর–বাহির
মাহ্বুব উল্লাহ্র আমার জীবন আমার সংগ্রাম বইয়ে তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও পেশাগত জীবনের পাশাপাশি গত ছয় দশকের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে। উনসত্তরে ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) ও এনএসএফের একাংশকে নিয়ে। চার সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি ডাকসুর সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
উনসত্তরে মাহ্বুব উল্লাহ্ ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীকালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি–এমএল ও ভাসানী–ন্যাপের সঙ্গেও সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭০ সালে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা গঠনের প্রস্তাব দেওয়ার দায়ে পাকিস্তান সরকার তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসই তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার পর সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপনা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে যোগ দেন। মাহ্বুব উল্লাহ্ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ–উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এরশাদের ‘মিয়ানমার মডেল’
মাহ্বুব উল্লাহ্র আত্মজীবনী পাঠ করলে বোঝা যায়, রাজনীতি ছেড়ে দিলেও রাজনীতি তাঁকে ছাড়েনি। বিশেষ করে ১৯৯১–২০০৭ পর্বের রাজনীতিকে তিনি অবলোকন করেছেন কখনো প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে, কখনো অনুঘটক হিসেবে। ১৯৮২ সালে এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থান সম্পর্কে মাহ্বুব উল্লাহ্র পর্যবেক্ষণ, ‘বেশ কিছুদিন ধরে এরশাদ বলে আসছিলেন, দেশ পরিচালনায় সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।’...দেশ পরিচালনায় এ ধরনের মডেল মিয়ানমারে চালু আছে। এর ফলে মিয়ানমারের জনগণের শান্তি ও স্বাধীনতা কার্যত হারিয়ে গেছে।
১৯৮২ সালে ক্ষমতায় আসার পর এরশাদ এক সহপাঠী সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে মাহ্বুব উল্লাহ্কে উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন (অবসর নেওয়ার পর যিনি পরে আওয়ামী লীগেও যোগ দিয়েছিলেন)। কিন্তু তিনি সামরিক সরকারকে সহযোগিতা করতে রাজি হননি। তাঁর মন্তব্য, ‘ক্ষমতালিপ্সু সেনাপতি বলতে যদি কেউ থাকেন, তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ছয় মাসের মাথায় ক্ষমতায় আসেন এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিনি ৯ বছর দেশ শাসন করেছেন।’ তিনি মনে করেন, ‘এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চেতনাই ছিল স্বৈরতন্ত্রের অবসান। আজ হয়তো সামরিক স্বৈরতন্ত্র নেই, কিন্তু টিকে আছে স্বৈরতান্ত্রিক ধ্যানধারণা।’