সিকল সেলের চিকিৎসাপদ্ধতি কি ক্যানসারেও পথ দেখাবে
বংশগত হিমোগ্লোবিন ব্যাধি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ শিশু হিমোগ্লোবিনজনিত রোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। এসব শিশুর প্রায় ৮০ শতাংশ আবার উন্নয়নশীল দেশে।
সিকল সেল অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা হিমোগ্লোবিনজনিত রক্তের একটি রোগ। ২০১৫ সালের হিসাবে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের সিকল সেল রোগ রয়েছে। আরও সাড়ে ৪ কোটি মানুষের সিকল সেল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাঁরা এ রোগের বাহক। এ রোগের প্রায় ৪০ শতাংশ দেখা যায় সাব-সাহারান আফ্রিকায়। তবে ভারত, দক্ষিণ ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার কিছু অংশেও এ রোগ দেখা যায়।
আন্তর্জাতিক অভিবাসনের উচ্চ হারের কারণে হিমোগ্লোবিনজনিত রোগ (থ্যালাসেমিয়া ও সিকল সেল অ্যানিমিয়া) বিশ্বের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সিকল সেল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে। তবে এই রোগের চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে গেল ৮ ডিসেম্বর।
সিকল সেল রোগের নিরাময়ে এই প্রথম ‘ক্যাসজেভি’ (Casgevy) নামক যুগান্তকারী এক জিনথেরাপির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। এ রোগের চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, টাইপ-১ ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগের চিকিৎসার নতুন পথ দেখাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
সিকল সেল অ্যানিমিয়া কী
মানবদেহে লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি) সাধারণত গোলাকার ও নমনীয় হয়। তারা রক্তনালিতে সহজেই চলাচল করে। সিকল সেল অ্যানিমিয়ায় কিছু লোহিত রক্তকণিকা কাস্তে (সিকল) বা অর্ধচন্দ্রের আকৃতি ধারণ করে, যেগুলো অনমনীয় ও চটচটে, এগুলো রক্তপ্রবাহে বাধা দিতে পারে। এসব লোহিত রক্তকণিকা বুক, পেট ও দেহের সংযোগগুলোয় ক্ষুদ্র রক্তনালিতে রক্তপ্রবাহকে বাধা দিলে চরম ব্যথা অনুভূত হয়। এটি রক্তাল্পতার প্রধান লক্ষণ।
এ ছাড়া রক্তপ্রবাহ ধীর বা ব্যাহত হলে হাত-পা ফুলে যেতে পারে, স্ট্রোক হতে পারে এবং কাস্তে আকৃতির কোষ প্লীহাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। সিকল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত নিউমোনিয়ার মতো প্রাণঘাতী সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা ও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এ ছাড়া সিকল সেল কোষ চোখে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালিতে আটকে যেতে পারে। এতে দৃষ্টিশক্তির ঘাটতি হতে পারে। রোগটি হিমোগ্লোবিন এস ডিজিজ বা সিকল সেল ডিজঅর্ডার নামেও পরিচিত।
সিকল সেল অ্যানিমিয়া হিমোগ্লোবিনের একটি রোগ। হিমোগ্লোবিন (Hb) হচ্ছে লৌহ (Fe2 +)-ধারণকারী অক্সিজেন পরিবাহী একটি মেটালোপ্রোটিন, যা প্রায় সব মেরুদণ্ডী প্রাণীর লোহিত রক্তকণিকায় থাকে। প্রত্যেক সুস্থ মানুষের প্রতি ১০০ মিলিগ্রাম রক্তে ১২ থেকে ১৮ মিলিগ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে। প্রতি গ্রাম হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন বহনের ক্ষমতা ১ দশমিক ৩৪ মিলিগ্রাম অক্সিজেন। হিমোগ্লোবিন অন্যান্য গ্যাসও পরিবহন করে। যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, সালফার মনোক্সাইড ও সালফাইড।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রক্তস্বল্পতা
- সিকল সেল অ্যানিমিয়া