সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
একদিন কলকাতার এক দল কবি-সাহিত্যিক এসে হাজির হলেন মাসুদ সাহেবের বাড়িতে। ১৯৫৪ সালের সাহিত্য সম্মেলনে ঢাকায় দেখা দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সেই দলে। তাঁরা প্রস্তাব দিলেন, কলকাতায় একটি বাড়ি ভাড়া করে শিল্পীদের একসঙ্গে রাখলে তাঁরা সবাই মিলে প্রয়োজনীয় মহড়া দিয়ে অনুষ্ঠান করে টাকা তুলে নিজেদের ব্যয়ভার নির্বাহের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
প্রস্তাবটি আমার কাছে বাস্তবসম্মত মনে হলো না। শিল্পীরা আপন পরিবার ছেড়ে শিল্পীদের দলে থাকতে রাজি হবেন কেন? একেকজনের একেক সমস্যা থাকা সম্ভব। অন্য পক্ষে, একটি বাড়িতে সব শিল্পীর পরিবার-পরিজনসুদ্ধ স্থান সংকুলান হওয়াও সম্ভব নয়।
দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কী করতে চান? বললাম, বরং একটি মহড়া দেওয়ার জায়গা ঠিক করে দিন, সার্বক্ষণিক ভাড়া গোনার দায় বাঁচবে। আমার কাছে অনেক শিল্পীর নাম-ঠিকানা আছে। সবাইকে আপনারা চিঠি দিলে আমরা একদিন একত্র হয়ে অনুষ্ঠান ছকে নিয়ে নিয়মিত মহড়ার ব্যবস্থা করতে পারি।
দীপেন বললেন, বেশ! আমার কাছেও কিছু শিল্পীর নাম-ঠিকানা রয়েছে। আপনার নাম করেই সবাইকে আমরা ডাকি!
১৪৪ লেনিন সরণির প্রায় ভেঙে পড়া দোতলা বাড়িতে এই সমাবেশের আয়োজন হলো। রাজশাহীর সারওয়ার জাহান, রফিকুল আলম, মুক্তি মজুমদার, চট্টগ্রামের শিলা দাস, শর্মিলা দাস, কল্যাণী ঘোষ, প্রবাল ঘোষ, উমা ঘোষ, খুলনার দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীপদ রায়, ময়মনসিংহের আলোকময় নাহা, সিলেটের রাখী চক্রবর্তী, ঢাকার ডালিয়া নওশীন, নায়লা জামান, সুকুমার বিশ্বাস—এ রকম অনেক মানুষ আমরা সেদিন মিলিত হলাম।
ঢাকার ছায়ানটে শেখ লুতফর রহমান যেসব সংগ্রামের গান শিখিয়েছিলেন—খুলনার আবু বকর সিদ্দিকীর লেখা সাধন সরকারের সুরের গান—এসব ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, গুরু সদয় দত্ত ও সলিল চৌধুরীর গান বাছাই করে নিয়ে মহড়া করার সিদ্ধান্ত হলো। সকাল ১০-১১টা থেকে একসঙ্গে গানের চর্চা হতো ঘণ্টা কয়েক।
দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধেশ্বর সেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অমিতাভ দাশগুপ্ত, তরুণ সান্ন্যাল, দেবেশ রায়, প্রসূন বসু, শঙ্খ ঘোষ, সন্তোষ কুমার ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বহু জ্ঞানী-গুণী ১৪৪ লেনিন সরণিতে আমাদের মহড়ার সময়ে এসেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন।
কিছুদিন মহড়া চলার পর ঢাকা থেকে মাহমুদুর রহমান বেণু, শাহীন মাহমুদ, ফ্লোরা আহমদসহ আরও কজন এসে যোগ দিলেন ওই আয়োজনে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন