কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে যা করা দরকার

যুগান্তর ড. জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২০

পেঁয়াজের বাজার অস্থির। দফায় দফায় এর দাম বেড়েছে। গত শুক্র ও শনিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। দেশটির অভ্যন্তরীণ পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য এমন ঘোষণা দেয় ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অফ ফরেন ট্রেডের দপ্তর। এরপর থেকেই বাংলাদেশের বাজারে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। মার্চে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। তবে এপ্রিল থেকে এর দাম বাড়তে থাকে। জুনের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকায় পৌঁছে। এরপর গত ৫ জুন থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। আমদানি করা পেঁয়াজের প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশই আসে ভারত থেকে। কারণ তাতে পরিবহণ খরচ কম। দ্রুত আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে আসা যায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। আমদানি মূল্যও হয় অপেক্ষাকৃত কম। তবে ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হলে অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আগস্টে পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্কারোপ করে ভারত। এরপর রপ্তানি কমতে এবং দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে গত ২৮ অক্টোবর পণ্যটির ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রতি টন ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দেয় ভারত সরকার। তাতেও অভ্যন্তরীণ মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাতে ১০ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের বাজারে সকালে-বিকালে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে পাইকারি মোকাম থেকে সর্বত্র। ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রির জন্য অনেকে দোকান থেকে সরিয়ে দিয়েছে পেঁয়াজ।


এভাবে রাতারাতি পেঁয়াজের দামের লাগামহীন বৃদ্ধি অযৌক্তিক। আমদানি করা পেঁয়াজের সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দামের উল্লম্ফন অনৈতিক। কারণ দেশি পেঁয়াজের সরবরাহের সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কহীন। এক্ষেত্রে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ক্রিয়াশীল। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের মূল্য অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার পণ্যটির খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ৬৪-৬৫ টাকা। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চারগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। তাদের অন্যায্য মুনাফার লোভের কারণেই মূলত অস্থির পেঁয়াজের বাজার। পেঁয়াজের বর্তমান উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি প্রায় ২২ টাকা। খামার প্রান্তে এর বিক্রয় মূল্য ২৫ থেকে ২৭ টাকা। বিপণন, পরিবহণ, সংরক্ষণ ও ব্যবসায়ীদের লাভ যোগ করে পেঁয়াজের মূল্য ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। মৌসুম শেষে তা সর্বোচ্চ ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। কোনোক্রমেই তা তিন অঙ্ক ছাড়াতে পারে না। পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠা খুবই অস্বাভাবিক ও অন্যায্য।


দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বার্ষিক প্রায় ৩৪-৩৫ লাখ টন। আমদানি হয় ৭-৮ লাখ টন। মোট প্রাপ্যতা ৪২-৪৩ লাখ টন। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ অপচয় হয়-পচে যায় এবং শুকিয়ে যায়। ফলে আমাদের খাওয়ার জন্য নিট পাওয়া যায় ২৮-৩০ লাখ টন। তাতে আমাদের চাহিদা মেটে। গত দু’বছর এমনই প্রাপ্যতা ছিল আমাদের। এক্ষেত্রে কোনো বিপত্তি ঘটেনি বা অতি মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ করা যায়নি। এর কারণ ছিল আমাদের প্রধান রপ্তানিকারী দেশ ভারতে কোনো অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেনি পেঁয়াজের। স্বাভাবিক পেঁয়াজ রপ্তানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি। এবার তা ঘটেছে। কারণ, পেঁয়াজ রপ্তানিকে প্রথমে নিয়ন্ত্রণ ও পরে নিষেধ করে দিয়েছে ভারত। তাতে সুযোগ পেয়েছে আমাদের অসাধু ব্যবসায়ীরা। অথচ এবারও দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৪ লাখ টন এবং এ নাগাদ আমদানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টন। তাতে পেঁয়াজের মোট প্রাপ্যতা দাঁড়ায় ৪২ লাখ টন। অপচয় বাদ দিয়ে ন্যূনপক্ষে ২৮-৩০ লাখ টন পেঁয়াজ অবশিষ্ট থাকে। তাতে আমাদের চাহিদায় কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। লাফিয়ে লাফিয়ে এ পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধি হওয়ারও কোনো যুক্তি নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও