এভাবে আর কত দিন চলবে
পরিচিত স্বজন-সুহৃদরা প্রায়ই ফোন করে জানতে চান, বিএনপির এই অবরোধ নামের হাস্যকর আন্দোলন কর্মসূচির ইতি ঘটবে কবে? তাঁদের বলি, আমি তো ভাই গণক নই, বিএনপির নীতিনির্ধারকও নই। সুতরাং বলব কী করে? তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, তাহলে কি এভাবেই চলতে থাকবে? দলটির নীতিনির্ধারকেরা কি আন্দোলনের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বুঝতে পারছেন না? তাঁরা কিসের আশায় দেশবাসীকে এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রেখে নির্বিকার আত্মগোপন করে আছেন?
এসব প্রশ্নের জবাব বিএনপির নেতারাই দিতে পারবেন। তাঁরা কি চলমান আন্দোলন স্থগিত করবেন, নাকি মুমূর্ষু আন্দোলনের অচল দেহ কাঁধে নিয়ে ক্লান্ত পদক্ষেপে পথ চলতে থাকবেন, সেটা তাঁরাই ভালো জানেন। তা ছাড়া এ পর্যায়ে এসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে যাবেনই-বা কোথায়? নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল থেকে তাঁরা চলে গেছেন পয়েন্ট অব নো রিটার্নে। পেছনে ফেরার যেমন উপায় নেই, সামনে যাওয়াও কঠিন। যদিও বিএনপির নেতারা এখনো আন্দোলনের সফলতা নিয়ে আশাবাদী। ৬ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘মাঠ গরম করার চেষ্টা করবে বিএনপি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমাগত হরতাল, অবরোধের পরেও আন্দোলনের মাঠ গরম না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে দলটির হাইকমান্ড নড়েচড়ে বসছেন।
তাঁরা আন্দোলনে গতি আনার জন্য নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছেন। এরপর ভোট প্রতিহত করতে মাঠে নামতে চায়। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথাও বলছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগারের বাইরে থাকা নেতাদের ভূমিকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘বিএনপি আন্দোলনেই আছে। আন্দোলন কীভাবে করতে হয়, এরই মধ্যে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। অপেক্ষা করেন। সময় হলেই দেখতে পাবেন।’
সেলিমা রহমানের এ বক্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম আমার এলাকার বিএনপির কয়েকজন কর্মীকে। ক্ষোভের সঙ্গে একজন বললেন, ‘হ্যাঁ, ওনারা সেই আশাতেই থাকুন। তৃণমূলের কর্মীরা আন্দোলন সফল করে শীর্ষ নেতাদের পকেট বা ভ্যানিটি ব্যাগে ভরে দিয়ে আসবে, আর তাঁরা সেই “সাফল্যের লেবেনচুস” চুষে চুষে খাবেন।’ আরেকজন তো বলেই ফেললেন, ‘আর না। এর আগে আন্দোলনে নেমে জেল খেটেছি। নেতারা পালিয়ে বেঁচেছেন। এবার তাঁরা না নামলে আর যাচ্ছি না।’ যুবদলের এক নেতা বললেন, ‘আন্দোলন যাকে বলে তৃণমূলও তা দেখাতে পারেনি। দেখাবে কীভাবে? তারা তো কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে চেয়ে আছে।
তৃণমূলে কর্মীরা আছে, নেতারা নাই। আপনি যান এলাকায়, বাটি চালান দিয়েও একজন নেতা খুঁজে পাবেন না।’ তাকে বললাম, ‘কেন, এক নেতা তো প্রতিদিনই ভিডিও বার্তায় আপনাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।’ শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন ওই যুবনেতা। শ্লেষমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, ‘নিজে আত্মগোপনে থেকে অন্যদের মাঠে নেমে আন্দোলন সফল করতে বলা একধরনের ফাজলামো। এসব কাপুরুষ নেতার কারণে দলের কর্মীরা এখন হতাশ। তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’