‘যত্নে রাখি ঢাকি’

সমকাল আবেদ খান প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:২৩

আমার কৈশোরের প্রথম পর্যায়ে একজন হাসিখুশি মানুষকে দেখেছিলাম। আমি সেসময় বাবার হাত ধরে লালবাগের ঐতিহাসিক দৈনিক আজাদ পত্রিকা অফিসে যেতাম। আমার মায়ের চাচা মওলানা আকরম খান দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁকে আমি বড়ো নানা বলে ডাকতাম। আমার পিতা সেখানকার জেনারেল ম্যানেজার। বিকেলে তিনি যখন অফিসে যেতেন আমাকে নিয়ে যেতেন তাঁর সঙ্গে। সেখানে আমার মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে খেলাধুলা, হৈহুল্লোড়, খুনসুটি নিয়ে মেতে থাকতাম। মাঝেমধ্যে বড় নানার বিশাল লাইব্রেরির ভেতর ঢুকে অনেক বইপত্র দেখতাম, নাড়াচাড়া করতাম। কিছু কিছু বই নিয়ে পড়তামও। তখন দৈনিক আজাদের বিশাল মাঠে ইজি চেয়ারে বসে থাকা বড়ো নানার কাছে বসে খেলাধুলা করতাম, তাঁর কাছে পুরনো দিনের নানা রকমের গল্প শুনতাম। সেসময় একজন ভদ্রলোককে দেখতাম প্রায়শই আমার নানার কাছে আসতেন। আমার মনে হতো সেই ভদ্রলোক মওলানা সাহেবের যথেষ্ট স্নেহধন্য। বিভিন্ন প্রসঙ্গে নানাভাবে তারা দুজনে কথা বলতেন, গল্প করতেন। অল্প কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন আবার অন্যদিকে চলে যেতেন। কখনো কখনো দেখতাম দৈনিক আজাদ অফিসের লম্বা টানা বারান্দায় তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে মাঝেমধ্যেই আদর করতেন, কথা বলতেন।


আমি তখনো জানি না কোন বিভাগে তিনি কাজ করতেন। কিন্তু তাঁর অত্যন্ত সদাহাস্যময় মুখটি তখনই আমাকে খুব আকর্ষণ করত। তাঁর আরো একটা ব্যাপার আমাকে খুবই আকর্ষণ করত সেটা হচ্ছে আমি শুনেছি যে অনেকসময় তিনি অভ্রান্ত ভবিষ্যৎ গণনা করতে পারতেন। তখনও আমার হাত দেখানোর বয়স হয়নি। আমার সেই বয়সে দেখতে পেতাম বড়ো নানার অত্যন্ত কাছের মানুষ একজন আমাদের তোফাজ্জল ভাই যাঁর কথা বলছি। বড়ো নানা কিছুটা হস্তরেখা বিষয় নিয়ে চর্চা করতেন বোধহয়। তাঁর কাছে এই বিষয়ক নানাবিধ বইপত্রও ছিল। হয়তো তোফাজ্জল সাহেবের কাছ থেকে এই বিষয়টি সম্বন্ধেই কিছু কথা শুনতেন, আলোচনা করতেন। 


তোফাজ্জল হোসেনের নিখুঁতভাবে ভবিষ্যৎ বলে দেয়ার এই ক্ষমতার কথা অন্যদের কাছে শুনে আমার কাছে অসম্ভব রকমের অতিমানবীয় একটা ব্যাপার মনে হতো। অব্যর্থভাবে ফলে যাওয়া তাঁর ভবিষ্যৎ বাণীর এই অতিপ্রাকৃত গুণের কথা অনেকেই জানতেন। পরবর্তীতে তাঁর চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর যখন আমিও বড়ো হয়েছি, তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় দেখা হয়েছে, তাঁর বাড়িতেও গিয়েছি। তখন একদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আচ্ছা আপনি ভবিষ্যৎ বলেন কী করে? তিনি কেবল স্মিত হেসে বলেছিলেন, এখানে কোনোক্রমেই অলৌকিক কোনো ব্যাপার নেই। মানুষের চেহারার ভেতর দিয়েই তার মনের ভেতরটা, তার কর্মকাণ্ড স্পষ্টভাবে বুঝতে পারা যায়। এভাবেই আমি ভবিতব্য অনুমান করি, বুঝতে পারি। 


একটা পুরনো কথা মনে পড়ল। যে কথা আমার স্মৃতির সঙ্গে উজ্জ্বল হয়ে আছে। তখন আমি ভোরের কাগজে সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেছি। ভোরের কাগজে একদিন একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। সর্বস্তরের গণ্যমান্যরা এলেন সেই অনুষ্ঠানে। তাদের মধ্যে ছিলেন আমার পেশাজীবনের অন্যতম কাণ্ডারি প্রয়াত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ছিলেন তোফাজ্জল ভাই, ছিলেন সরদার ফজলুল করিম, আবুল মাল আব্দুল মুহিত সহ অনেক গণ্যমান্য মানুষ। সেদিনের সেই দিনটি পুরনো বন্ধুদের নিয়ে একটা দারুণ আড্ডার ভেতর দিয়ে অতিবাহিত হয়। সেই সময় ভাষাসৈনিকদের মধ্যে যারা জীবিত ছিলেন অধিকাংশই সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সবাই যেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সেই দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন। পুরনো সেই দিন ও গল্পগুলোর মধ্যে তোফাজ্জল সাহেব মেতে উঠেছিলেন সেই স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে। সে এক অনুপম দৃশ্য। সেই দৃশ্য আজও আমাকে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও