নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়

www.ajkerpatrika.com জাহীদ রেজা নূর প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৪৯

আমাদের দেশে নির্বাচনী মাঠে প্রতিপক্ষকে দমননিপীড়ন করার ঐতিহ্য আজকের নয়। আইয়ুব খানের আমল থেকে ধরলে দেখা যায়, ১৯৬৫ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বিরোধীপক্ষের কর্মীদের তুমুলভাবে দমননিপীড়ন করা হয়েছিল। তাতে ভোটের মাঠে নিজেদের কর্তৃত্ব রাখার পথ সুগম হয়েছিল।


আইয়ুব খানের বিচিত্র সৃষ্টি মৌলিক গণতন্ত্রীরাই তৎকালীন দুই পাকিস্তানে ভোট দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি এবং পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় আইয়ুব খানের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন মিস ফাতেমা জিন্নাহ। এতে ভীষণ রকম খেপে গিয়েছিলেন আইয়ুবশাহি। করাচির বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ইত্যাদি চালানো হয়েছিল স্বয়ং আইয়ুব খানের ছেলে গওহর আইয়ুবের নেতৃত্বে।


পাকিস্তানের রাজনীতিতে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার জনকও বোধ হয় আইয়ুব খান। খুবই অবাক করা বিষয় হলো, এই নির্বাচনে মিস ফাতেমা জিন্নাহর হয়ে ন্যাপের পক্ষ থেকে মাওলানা ভাসানীর প্রচারণা চালানোর কথা ছিল উত্তরবঙ্গে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হয়েছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে। কেন আওয়ামী লীগকে পূর্ববঙ্গের দুটো বিভাগে প্রচারণা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এ নিয়ে ভাসানী সাহেবের দলের আপত্তি ছিল। তাই তিনি একবারের জন্যও উত্তরবঙ্গে গিয়ে মিস ফাতেমা জিন্নাহর হয়ে ভোট চাননি। এতে আইয়ুব খানের সঙ্গে মাওলানা ভাসানীর কোনো আঁতাত হয়েছিল কি না, তা নিয়ে একধরনের জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় যদি সম্মিলিত বিরোধী দলের ঐক্য বজায় থাকত, তাহলে আইয়ুব খানের প্রতি অনাস্থার বিষয়টি সহজেই প্রমাণিত হতে পারত বলে অনেকে মনে করেন। আইয়ুব খানের তৈরি মৌলিক গণতন্ত্রীদের অনেকেই তখন ফাতেমা জিন্নাহকে ভোট দিয়েছিলেন।


১৯৭০ সালে পাকিস্তানে যে সাধারণ নির্বাচন হয়, তাতে জনগণের ভোট দেওয়ার পথ সুগম হয়। এবার আর মৌলিক গণতন্ত্রীরা ভোট দেননি; বরং সাধারণ জনগণ তার নিজের ভোট প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন। ইদানীং কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন যে সেই নির্বাচনেও কারচুপি হয়েছিল। এই হঠাৎ ‘হয়ে ওঠা’ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচন-পরবর্তীকালে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, এ রকম অভিযোগ কোনো পক্ষ থেকেই করা হয়নি। নির্বাচনের ফলাফল এ রকম হওয়ার একটা বড় কারণ ছিল এই, জাতি তত দিনে ঠিক করে ফেলেছিল, কে হবে তাদের মূল নেতা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ভাসানী ন্যাপ যে দোদুল্যমানতার পরিচয় দিয়েছে, সেখানেও ভাসানী-ইয়াহিয়ার মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়েছিল কি না, সে প্রশ্ন উঠেছিল। আওয়ামী লীগ ছাড়াও পূর্ব পাকিস্তানে ভাসানী ন্যাপের জনপ্রিয়তা ছিল। কেন তারা নির্বাচনে অংশ নিল না, তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার।


১৯৭৩ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল তাতে কারচুপির বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছিল বলে লেখালেখি হয়েছে। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন বিরোধী দলকে এক শর মতো আসন ছেড়ে দিতে। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেল সংসদে বিরোধীদের প্রায় ঠাঁই নেই বললেই চলে। সে সময় গণতন্ত্র পোক্ত করার একটি সুযোগ সৃষ্টি হতে পারত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে।কিন্তু সে সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নানা ধরনের অব্যবস্থা, সরকারের পিঠে ছুরি মারার ষড়যন্ত্র ইত্যাদির মিশেলে যে নির্বাচন হয়েছে, তা খুব গণতান্ত্রিক উপায়ে হয়েছে, সেটা বলা যাবে না। গণতন্ত্র তাতে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও