বিএনপি চাইলেও কি এখন নির্বাচনে আসতে পারবে?
২৮ অক্টোবরের পর দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে গেল। সেদিনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের জনসমর্থন প্রমাণ করতে বড় বড় সমাবেশ করছিল। সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অনেকটা সংযত ছিল, যদিও অনেকের মতে সেখানে মার্কিন ভিসা নীতির প্রভাব ছিল। বিরোধী দলের সমাবেশে যাতে লোকজন নির্বিঘ্নে না আসতে পারে, সে জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করলেও তারা সেটি পণ্ড করেনি।
কিন্তু ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কেন নাশকতা ঘটাল, কারা ঘটাল, কাদের হাতে পুলিশের একজন সদস্য ও যুবদলের একজন কর্মী মারা গেলেন, সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো কখনো জানা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেদিনের অঘটনের দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দলের কেন্দ্রীয় অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিল এবং বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চালাল।
বিএনপিও আন্দোলনের শেষ অস্ত্র হিসেবে হরতাল-অবরোধ অব্যাহত রাখল। আমাদের বৈরী ও বিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতি যেমন উন্নয়নের চাকা থামিয়ে দেয়, তেমনি জনজীবনেও নিয়ে আসে গভীর অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা।
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ এখন দুই শিবিরে বিভক্ত। এক শিবিরে নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি, আরেক শিবিরে গ্রেপ্তার–আতঙ্ক ও হরতাল-অবরোধের ডাক। আমাদের দেশে যে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়, ২০০৮ সালের পর সেটি আর দেখা যায়নি। নির্বাচনটি সুষ্ঠু হলে ভোটাররা এক দিনের হলেও দেশের মালিক মনে করতেন। ভাবতেন, আগামী পাঁচ বছরের জন্য কারা ক্ষমতায় আসবে, সেটা তঁারাই ঠিক করবেন। কিন্তু এখন ভোটারের রাজা ভাবার দিন শেষ।
গত দুটি নির্বাচনের (২০১৪ ও ২০১৮) প্রেক্ষাপটে সবার প্রত্যাশা ছিল, ২০২৪ সালের নির্বাচনটি সব দলের অংশগ্রহণে হবে এবং ভোটাররা তাঁদের পছন্দসই প্রতিনিধিকে বেছে নিতে পারবেন। এ নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ঘন ঘন গোলটেবিল–ভার্চ্যুয়াল সভার আয়োজন করেছেন, বিদেশি কূটনীতিকেরা দফায় দফায় সরকারি ও বিরোধী দলের রাজনীতিকদের সঙ্গে বসেছেন। কিন্তু দিন শেষে ফলাফল শূন্য। বাংলাদেশ আরেকটি প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচনই পেতে যাচ্ছে।
তফসিল ঘোষণার আগে তো বটেই, পরেও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও বলছে, সব দলকে নির্বাচনে আনতে তারা ছাড় দিতে রাজি আছে। গত বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘একটি দল’ নির্বাচনে এলে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর বিষয় বিবেচনা করা যাবে। একটি দল বলতে তিনি বিএনপিকেই ইঙ্গিত করেছেন।