এরপর কী?
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ বড় দুই দলের রাজনীতি এখন কণ্ঠশীলনেই আটকে আছে। বিএনপি নেতাদের প্রতিদিনকার গৎবাঁধা সরকারবিরোধী কথা বলা ছাড়া দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আর কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না। আমাদের বড় দুই দল একসময় দিনের পর দিন হরতাল দিয়ে মানুষকে ত্যক্তবিরক্ত করে ফেলেছিল। তাই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অকার্যকর হয়ে গেছে হরতাল। এ সত্যটি বুঝতে পেরে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে হরতাল ডাকার ঝুঁকি নিতে চাইছে না বিএনপি। প্রতিদিন যেভাবে গৎবাঁধা সরকারবিরোধী বক্তব্য রেখে চলছেন বিএনপি নেতারা, তা বহু ব্যবহারে ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে তেতো হয়ে উঠেছে। ঢাকায় বড় জমায়েত দেখে আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন কিনা জানি না। এ সত্যটিও মানতে হবে যে, একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশেও বেশ জনসমাগম হচ্ছে। দুই পক্ষই বেশ ভালো জানে, রাজনীতি বলয়ের বাইরে এসব প্রকৃত জনসমাবেশ নয়। সব রাজা-মন্ত্রীর অতীত-বর্তমান দেখা হয়েছে বলেই সব নেতার কণ্ঠশীলন মানুষকে তেমন আলোড়িত করছে না। সবকিছু কপালের ওপর ছেড়ে দিয়ে এখন মানুষ জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত।
সবচেয়ে আতঙ্কের কথা, এখন পর্যন্ত বড় দুই দল যার যার জায়গায় অনড় অবস্থানে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকার হচ্ছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, গণতান্ত্রিকবোধ গাছের এতটাই মগডালে চলে গেছে যে, মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে আমলেই আনছেন না কেউ। মানুষের ভাষা পড়তে পারলে বুঝতে পারতেন বা হয়তো বোঝেনও, সাম্প্রতিক তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে মানুষের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে তেমন আস্থা নেই। সরকারের ভেতরে গণতন্ত্রহীনতার কারণে দুর্নীতিবাজদের দাপট এতটা বেড়ে গেছে যে, তা হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে এখন। তাই আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ আছে বলে বিএনপির কাতারে শামিল হবে, তেমন বোকা বোধহয় এদেশের মানুষ নয়।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তারা প্রমাণ করেছে এ দল আন্দোলনে এক নম্বর, আবার এখন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতিতেও টপকে গেছে বিএনপিকে। এক্ষেত্রেও এক নম্বর। অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের দুর্ভাগ্য এই যে, অসংখ্য কর্মী-সমর্থকের সমর্থন পেলেও তারা আন্দোলনে নেমে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। একে বিএনপির ক্রনিক অসুখ বলা যেতে পারে। অনেক বছর আগে থেকে তারা সরকারের বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে আসছেন। প্রয়াত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের সুললিত কণ্ঠের ‘পদত্যাগ’ শব্দ এখনো কানে বাজে। এভাবে বছরের পর বছর বিএনপি নেতারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করেই যাচ্ছেন অক্লান্তভাবে। এ শব্দটি শুনতে শুনতে সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই এখন ক্লান্ত।