পরিকল্পনামন্ত্রী এ কী বললেন!
আর কোনো চিন্তা নেই আমাদের। কলাম লেখকদেরও কালি খরচ করার প্রয়োজন নেই। কারণ ‘ওষুধ’ পাওয়া গেছে। ওষুধ সিন্ডিকেট দমনের। এর আবিষ্কর্তা আমাদের মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী, অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি এমএ মান্নান। ১৪ অক্টোবরের কাগজে দুটি খবরের শিরোনাম দেখলাম। একটি হচ্ছে : ‘সিন্ডিকেট দেখতে পারলে ব্যবস্থা নিতে পারতাম।’ দ্বিতীয় খবরটির শিরোনাম হচ্ছে : ‘বাজার নিয়ন্ত্রণের শক্তি কারও নেই-পরিকল্পনামন্ত্রী’। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসাবে আরও বলেছেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি দুনিয়ায় কারও নেই। বাজার নিজেকেই নিজে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কিছু অনুষঙ্গ আছে-সরবরাহ ও চাহিদা।’ মন্ত্রী আরও বিশদভাবে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি উদীয়মান। এ ধরনের অর্থনীতিতে কিছু বিকৃতি থাকবেই, লাভ বা মুনাফার সুযোগ নেবেই। নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। তবে তারা একেবারে নতুন। দাঁত গজাতে হবে। তারা আস্তে আস্তে অভিজ্ঞ হচ্ছে, কাজ করছে।’ ওই সভায় অনেক কথা তিনি বলেছেন। আমরা আর বিস্তারিত বক্তব্যে যাচ্ছি না। কারণ সিন্ডিকেটের ওষুধ আমরা পেয়ে গেছি। সবাই বলছে, সিন্ডিকেট সব খেয়ে ফেলছে। মানুষের সর্বনাশ করছে। মন্ত্রীরা বলছেন, সংসদে আলোচনা হচ্ছে। এই তো সেদিন কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, আলুর বাজার থেকে ‘সিন্ডিকেট’ করে কোল্ড স্টোরেজওয়ালারা টাকা লুট করে নিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্প প্রতিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী আমাদের সিন্ডিকেটের অত্যাচারের কথা শুনিয়েছেন। সরকার যে তাদের কাছে অসহায়, সে কথাও তারা বলেছেন।
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত অনেকবার সিন্ডিকেটের কথা বলতে গিয়ে ‘সরকারের ভেতরে সরকার’র কথা বলেছেন। এছাড়া বিভিন্ন কাগজ প্রায় প্রতিদিন স্টোরি করে আমাদের জানাচ্ছে যে, পণ্যভিত্তিক সিন্ডিকেট দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানও এ সম্পর্কে আমাদের নিয়মিত জানাচ্ছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাবেক আমলারা বলছেন। এসব শুনে শুনে, দেখে দেখে মানুষ দিন দিন দিশেহারা হয়ে ভাবছিল-তাহলে উপায়? এর কি কোনো প্রতিকার নেই? প্রতিকার হবে না? আমরা কি সিন্ডিকেটীয় ব্যবসায়ীদের কাছে মার খেতেই থাকব? আমাদের কি কিছুই করণীয় নেই? সরকারেরও কি কোনো দায়িত্ব নেই? এমন সব প্রশ্ন অনেকদিন ধরে মানুষের মনে জাগছিল। আমি নিজেও অনেক ভেবেছি-তবে কি আমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই? আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তেলের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বেড়েছে। আমদানির খরচ বেড়েছে। সবই সত্য। কিন্তু যখন দেখা গেল, যে আলুতে আমরা সবসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ, যে আলু খাওয়ার জন্য বিগত ‘কেয়ারটেকার’ সরকারের আমলে আমাদের জনপ্রিয় একজন শিল্পী গান গেয়েছেন, যে গান টেলিভিশনে আমরা দিন-রাত শুনেছি, সেই আলু বিনা কারণে বাজারে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আলু আমরা আমদানি করি না। ডিমেও তা-ই। সব সময় বলা হচ্ছে, ডিমেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কয়েকদিন আগেই কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের কৃষি, খাদ্য, পশু ও বন মন্ত্রণালয় বলেছে, কৃতিত্ব নিয়েছে কৃষিতে আমাদের পারফরম্যান্সের জন্য। অথচ বাজারে এখন কোনো সবজিতেই হাত দেওয়ার উপায় নেই। একটা ছোট্ট লাউয়ের দামও ১০০ টাকা। হচ্ছেটা কী-এ প্রশ্ন ছিল সবার মনে। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সিন্ডিকেটই আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।