পুলিশ-আমলা সামলান
নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের জবাবে তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘দেশে পাগল আর শিশু ছাড়া কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তি নেই।’ তাঁর এই কথাটি নিয়ে তখন তুমুল সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কথাটি কিন্তু মিথ্যা নয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সব মানুষেরই ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ আছে। আর ‘নিরপেক্ষতা’ একটি খুবই আপত্তিকর শব্দ। একজন বিবেকবান মানুষ কখনো নিরপেক্ষ হতে পারেন না। একজন বিবেকবান মানুষ ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারবে। তিনি অবশ্যই সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেবেন।
ব্যক্তি অবস্থান বা পদবি যাই হোক, প্রত্যেকটি মানুষই কোনো না কোনো দলকে সমর্থন করবেন। ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে সবারই অধিকার আছে, তার পছন্দের দল বা প্রার্থীকে ভোট দেয়ার। কিন্তু সবাইকেই তার পছন্দ প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। যারা সরাসরি দল করেন, তারা তো প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান জানাতেই পারেন। কিন্তু না জানালেও ক্ষতি নেই। না জানানোর অধিকারও সবার আছে। এ কারণেই গোপন ব্যালটে ভোটের ব্যবস্থা।
পছন্দ করার অধিকার যেমন আপনার আছে, তেমনি তা গোপন রাখার অধিকারও আছে। তবে আপনার অবস্থান, পেশা, পদবীর ওপরও নির্ভর করে আপনি আপনার পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ্যে জানাতে পারবেন কিনা। যেমন প্রধান নির্বাচন কমিশনারও তো নিশ্চয়ই কাউকে না কাউকে ভোট দেবেন। কিন্তু তাতে তার অবস্থান ক্ষুণ্ণ হবে। তিনি তার সাংবিধানিক শপথের কারণেই অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কারো প্রতি আচরণ করতে পারবেন না। যেমন সাংবাদিকদের কোনো শপথ নিতে হয় না। কিন্তু প্রতিটি সাংবাদিকেরই বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতা আছে।
তাই একজন পেশাদার সাংবাদিক কোনোভাবেই কোনো দলের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ্যে ঘোষণা করবেন না। তেমনি সরকারি কর্মচারিদেরও চাকরিবিধি মেনে চলতে হয়। তারা সরকারের হয়ে কাজ করবেন। গোপনে যে দলকেই সমর্থন করুন, প্রকাশ্যে কোনো দলের পক্ষে কাজ করার বা ভোট চাওয়ার অধিকার বা সুযোগ কোনো সরকারি কর্মচারির নেই।