আসছে নির্বাচন, জমবে নাটক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নতুন নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই এ ধরনের নাটক, যাত্রাপালা, একাঙ্কিকা মঞ্চস্থ হতে দেখা যায়। সেই সব নাটক, যাত্রাপালা, একাঙ্কিকার পাত্রপাত্রীরা আমাদের সুপরিচিত। তাঁরা কেউ পার্টি বদল করেন, কেউ জোট ভেঙে নতুন জোট করেন। আবার কেউ কেউ বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়ে যান। নির্বাচনের আগে এসব দেখতে দেখতে দর্শক, মানে বাংলাদেশের জনগণ এখন ক্লান্ত, বিরক্ত। একটা সময় ছিল নির্বাচন ঘনিয়ে এলে জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হতো কোন নেতা কোন দলে ভিড়ছেন, তা দেখার জন্য। অনেকটা ফুটবল-ক্রিকেট খেলোয়াড়দের দলবদলের মতো। খেলোয়াড়েরা যেমন জার্সি পাল্টে ফেলেন, তেমনি একশ্রেণির রাজনীতিকও তাঁদের মার্কা বদলে ফেলেন নিমেষেই। এখন অবশ্য নাটক হয় বৃহৎ পরিসরে। এসবের মধ্যে রয়েছে কোন দল কোন দলের সঙ্গে জোট করছে, কোন দল কোন জোট ত্যাগ করছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট মতবিরোধের ফলে দলে বিভক্তি, এমনকি ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি। আদর্শগত বিরোধ নয়, শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল-জোট ভেঙে যাওয়ার নজিরও আছে।
এবারও সেই আলামত দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতায় আছে, তাই এ বাতাস তাদের স্পর্শ করতে পারবে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি এবং সে কারণে নেতা-কর্মীদের কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে শতাধিক দলটির হাইকমান্ডের কালো তালিকায় রয়েছেন। তাঁদের আগামী নির্বাচনে নৌকার মাঝি হওয়া অনিশ্চিত। বিগত ৫ কিংবা ১০ বছরের আমলনামা বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি এবার মনোনয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে অধিকাংশ কীর্তিমানেরই কপাল পোড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের কারও কারও বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের এমন সব অভিযোগ রয়েছে, যা দলের ভাবমূর্তিকে বহুলাংশে ক্ষুণ্ন করেছে। সেই ভাবমূর্তিকে প্রতিস্থাপিত করতে হলে ওই বিতর্কিতদের সম্বন্ধে নতুন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
অন্যদিকে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি রয়েছে এলোমেলো অবস্থায়। তারা আন্দোলন করবে না নির্বাচনে মনোনিবেশ করবে, তা-ই যেন ঠিক করে উঠতে পারছে না। আন্দোলনের সফলতার প্রশ্নে দলটির তৃণমূলের কর্মীরা রয়েছেন ধোঁয়াশার মধ্যে। যদিও কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁদের এই বলে উজ্জীবিত রাখতে চাইছেন যে আন্দোলনে সরকারের পতন হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে তাঁরা সরকার গঠন করবেন। তবে নেতাদের এই আশ্বাসে তেমন আস্থা রাখতে পারছেন না কর্মীরা। কেননা, আওয়ামী লীগের মতো সাংগঠনিক শক্তিসম্পন্ন একটি রাজনৈতিক দলের সরকারকে গদিচ্যুত করতে যে ধরনের আন্দোলন দরকার, তার ধারেপাশেও যেতে পারেনি বিএনপি; বরং ক্ষণে ক্ষণে বিরতি দিয়ে নতুন করে কর্মসূচি শুরু করায় কর্মীদের মধ্যে একরাশ হতাশা ভর করেছে।