মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে যা খুশি তা বলা নয়
ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্থগিত করে নতুন প্রণীত সাইবার নিরাপত্তা আইন বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তনে এর অপপ্রয়োগ রোধ হবে কি?
তানজীব উল আলম: আমার কাছে মনে হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রে মূল যে অভিযোগের জায়গাটা, তাতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই পরিবর্তনটা হচ্ছে, মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটাকে অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সাংবাদিকেরা কোনো রিপোর্ট যখন করেন, সেই বক্তব্য সরকারের পছন্দ না হলে এই আইনে মামলা করে তাঁদের হয়রানি করা হয়েছে। তিনটি ধারার অধীনে মামলাগুলো করা হয়। এক. মানহানিকর কোনো বক্তব্য রাখা হলে; দুই. কোনো বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয় এবং তিন. কোনো বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দেয়। আসলে এই তিনটি ধারায় মামলা করে মানুষকে হয়রানি করার কথা বলা হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা বাতিলের সুপারিশ করেছিল। সম্পাদক পরিষদ ৯টি ধারার মৌলিক কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে ২১ নম্বর ধারাটি অজামিনযোগ্য রয়ে গেছে। অন্য ধারাগুলোতে শাস্তি কমানো ছাড়া মৌলিক কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। এখন তাহলে কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তানজীব উল আলম: প্রথমত, ২১ ধারার কথা বলা হচ্ছে। সেটা হচ্ছে মূলত মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং বঙ্গবন্ধুর অবমাননা বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয় ডিজিটাল মাধ্যমে, তাহলে এর জন্য শাস্তি হবে। এখন খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই কয়েকটি বিষয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং একটি জাতির গড়ে ওঠার যে কাঠামো, তার মৌল ভিত্তি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আপত্তিকর চর্চা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত বলে সরকার মনে করে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সরকার মনে করছে এ ক্ষেত্রে তারা কোনো ছাড় দেবে না। এটা তো সরকারের পলিসির ব্যাপার। এখন কথা হলো, যারা এ কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী চায়, তারা আসলে এ কয়েকটি বিষয়ে কী বলতে চায়? আমার জানা মতে, ২১ ধারায় এখনো কোনো মামলা বা কারও কোনো শাস্তিও হয়নি। যে ধারার অধীনে কোনো মামলা হয়নি, সেই ধারা কীভাবে আপত্তিকর হতে পারে? আর এই ধারায় যে কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ আছে, তা বাঙালি জাতির পরিচয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পলিসিগতভাবে সরকারের যে সিদ্ধান্ত, সেটার কোনো ব্যত্যয় আমি দেখি না।