ডলার সংকটে সৌরবিদ্যুৎ যেভাবে সমস্যার সমাধান দিতে পারে
দু-তিন বছর ধরে বিশ্বে জ্বালানি তেলের বাজারে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে এবং এর সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে দেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলার অন্যতম উপায় হচ্ছে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা হ্রাস করা। ডলার-সংকটের কারণে আমরা একদিকে যেমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করছি, তেমনি জ্বালানি পরিস্থিতির সামাল দিতে লোড শেডিংসহ প্রায় সব জ্বালানির মূল্যের উল্লম্ফন দেখতে পাচ্ছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো বহুলাংশে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল; যদিও বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদনক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় নূতন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে আমাদের আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভর করতে হবে, যা বিশ্বের বর্তমান মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয়বহুল।
নীতিনির্ধারণী মহলের অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আগামী দশকের মধ্যে জ্বালানি তেলের আমদানি প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এসব বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই বহু লেখালেখি চোখে পড়ছে এবং প্রায় সব লেখকেরই মতামত নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার ঘটানো।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস সৌরশক্তি। গত এক দশকে সোলার প্যানেল এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির দাম যেভাবে কমে এসেছে, তাতে বাংলাদেশ সৌরবিদ্যুতের মূল্য ইউনিটপ্রতি ৭ টাকার নিচে নেমে এসেছে, যেখানে বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় খরচ ইউনিটপ্রতি ১০ টাকার ওপরে উন্নীত হয়েছে। সুতরাং সৌরবিদ্যুতের প্রসারের প্রস্তাবগুলোকে যৌক্তিক মনে করার যথেষ্ট উপাত্ত রয়েছে। কিন্তু সৌরবিদ্যুতের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যার প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমত, সৌরবিদ্যুৎ তৈরি হবে দিনের বেলা যখন সূর্যের আলো বিদ্যমান। সন্ধ্যার পর থেকে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন যখন শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে এবং যখন বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ বা পিক আওয়ার, তখন এই চাহিদা মেটানোর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভরশীল বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বাভাবিকভাবে সারা দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে না, শুধু সন্ধ্যা থেকে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত চালু থাকবে। এদের বলা হয় পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট। মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টা চালানোর কারণে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব মিলেয়ে খরচ অত্যন্ত অধিক হয় এবং বর্তমান বাজারে এদের উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ হবে ইউনিটপ্রতি ২২ থেকে ২৫ টাকা, যা আমাদের গড় বিদ্যুৎ খরচের প্রায় দ্বিগুণ।