নারী কিছুতেই আটকায় না, আটকানো হয়
একবার বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, একই সঙ্গে বাবা এবং মা দুটোই হওয়া যায় কি না? আবেদ চৌধুরী অনেক বড় জেনেটিক বিজ্ঞানী। অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, গবেষণা করেন। তিনি আমার প্রশ্নে খুব বিস্মিত হয়েছিলেন। বললেন, কি বলছেন আপনি? বললাম, সেলফ্ ফার্টিলাইজেশন। তিনি আরও বিস্মিত হয়ে বললেন, যেমন? বললাম, হাইড্রাতে যেমন হয়, আবার অনেক ফুল নিজেই নিজেকে নিষিক্ত করে। নিজের সঙ্গে নিজে। বললেন, তা হয়, কিন্তু মানুষের মতো উন্নত জীবের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। মানুষের বায়োমেকানিক্স ভিন্ন। এখানে বাবা এবং মা আলাদা আলাদা। আর নারী কেবল মাত্র মা হতে পারে, সন্তান ধারণ এবং জন্ম দিতে পারে।
মানুষের জন্ম সত্যিই এক বিস্ময়। কি করে মাতৃগর্ভে একটি ভ্রণ দিন মাস পার করে মানব শিশুতে রূপ নেয়, পরিণত হয় তা ভাবনারও অতীত। তা কেবল মাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ তায়ালাই জানেন। তার এক অপার মহিমা। আর এই মহিমা ধারণের গুণ, যোগ্যতা, ক্ষমতা মহান সৃষ্টিকর্তা কেবল নারীকেই দিয়েছেন। মাতৃগর্ভের স্মৃতি আমাদের মনেও থাকে না, সে আরেক জীবন! জন্মের পর আরেক নতুন যাপন।
নারীর এই যে গুণ, যোগ্যতা, ক্ষমতা তা বিস্ময়ের চেয়েও বিস্ময়কর। এই সক্ষমতা, ধৈর্য, সাহসিকতা আর কাউকে দেয়া হয়নি। কোন পুরুষকে যদি ভাবতে বলা হয়, মা হবার কথা সে রীতিমত জ্ঞান হারাবার উপক্রম হবে। আমি তো ভাবতেও পারি না, কি করে একজন নারী দিন মাস পার করে সন্তান ধারণ করে, আবার সে তার সকল স্বাভাবিক কাজকর্মও করে। শুধুমাত্র মেয়েদের পক্ষে, মায়েদের পক্ষেই সম্ভব জগতে। এমন কি যে নারী মা হয়নি বা কোন কারণে যার মা হওয়া হয়ে উঠেনি, সেও কিন্তু একই মানসিক যোগ্যতা রাখে, প্রস্তুতি থাকে, মেয়ে হবার কারণে।
ফলে প্রতিটি নারী জগতের শ্রেষ্ঠতম সক্ষম, সামর্থ্যবান, ক্ষমতাবান মানুষ-আমার বিবেচনায়। ফলে নারী কীসে আটকায়? বলে যারা উত্তর খোঁজায় ব্যস্ত, তাদের ব্যস্ততা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে শেষ পর্যন্ত।
সবচেয়ে বড় কথা, এই ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলাটাই নেহাত অমূলক। নারী কিছুতেই আটকায় না। জন্মগত ভাবে সে মুক্ত, স্বাধীন, নিজের মতো। তাকে বরং বিভিন্নভাবে আটকানোর কৌশল খোঁজে পুরুষতন্ত্র। কখনো তারা আটকাবার এই কৌশলের নাম দেয় রাষ্ট্র, কখনো নাম দেয় সমাজ, কখনো নাম দেয় ধর্ম, কখনো নাম দেয় সংস্কৃতি-রীতি। যখন যেমন নাম দিলে সুবিধে তাদের। বলে রাখা ভালো, ধর্মও নারীকে আটকায়নি। এমনকি ইসলামও নয়।
বরং প্রকৃত ইসলাম ও মোল্লাতন্ত্র যে এক নয় তা বোঝা জরুরি। ইসলামে বলা হয়েছে, পর্দা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু কোথাও কি শুনেছেন কেউ, পুরুষের পর্দার কথা? কোনো আলোচনা বা কোথাও? আর এই পর্দারও অনেক ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপট রয়েছে। শুধু হাত মোজা, পা মোজা আর হেজাবে মুখ ঢাকার অর্থ পর্দা নয়। পর্দার অর্থ আরো অনেক বড়, উন্নত মানসিকতার এক আধ্যাত্ম।