নারীর ক্ষমতায়ন: একটি জনপ্রিয় ধোঁকা
যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদের স্পিকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে নারীর অধিষ্ঠান, সে দেশে বসে নারীর ক্ষমতায়নকে ধোঁকাবাজি বলবার মতো স্পর্ধা দেখানো উচিত নয়। নারী এখানে সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে সসম্মানে বহাল হয়েছেন, হচ্ছেন। দেশে যদি নারীর অবস্থার উন্নতি না হতো, তাহলে এতসব রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে প্রাইভেট সেক্টরের বিভিন্ন জরুরি পদে নারীদের দেখা যেত না। পৃথিবীর কিছু দেশে যখন শুধু ঘোমটা সরে গিয়ে চুল দেখা যাওয়ার ‘দোষে’ নারীকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় কিংবা কন্যাশিশুকে ভ্রূণ অবস্থায়ই হত্যা করা হয়, সে হিসেবে নারীর অবস্থা কিংবা অবস্থান নিশ্চয়ই যথেষ্ট ভালো এখানে।
আত্মশ্লাঘা কিংবা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে হলে অবশ্যই আপনি আরও যুক্তি দিতে পারেন। ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ ধরনের গালভরা কথা, ব্যক্তিগতভাবে আমি যাকে ‘এনজিও টার্ম’ বলতে বেশি পছন্দ করি। শুনতে ভালো শোনালেও ক্ষমতায়নের গর্জনের আড়ালে বর্ষণ কম। ‘ক্ষমতা’ শব্দটি নিয়ে সমস্যা অনুভব করার প্রধান কারণ, ক্ষমতা আসলে দুর্নীতি সৃষ্টি করে। ক্ষমতার চর্চা মূলত মানুষের সভ্যতার সকল সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা যাকে পিতৃতান্ত্রিক বা পুরুষতান্ত্রিক আচরণ বলি, সেগুলোর মূল কারণ পুরুষতন্ত্রের চর্চার মাধ্যমে পাওয়া ক্ষমতা। পুরুষের সমাজে টিকে থাকতে হলে, নিজের অধিকার আদায় করতে হলে নারীকে ক্ষমতা অর্জন করতে হবে–এই ধারণাটির সঙ্গেই আমি একমত নই।
শুরুতেই বলে নেওয়া ভাল, ক্ষমতার লড়াইয়ে নেমে পুরুষতন্ত্রকে মোকাবিলা করা যায় না। পুরুষতন্ত্রের বিপরীতে নারীতন্ত্র তৈরি করা, পুরুষ যেভাবে নারী শিশু, ভিন্ন লিঙ্গের মানুষের ওপর নিজের পৌরুষিক ক্ষমতার প্রয়োগ করে এসেছে সেই একই উপায়ে ‘ক্ষমতায়িত’ নারীরা পুরুষ, শিশু, অন্য লিঙ্গ কিংবা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাপ্রাপ্ত নারীর ওপর নবলব্ধ ক্ষমতার প্রয়োগ করবে এমনটি আশা করা নারীবাদী আন্দোলনের কাজ নয়। লৈঙ্গিক বৈষম্য নিরসনে পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামো ভেঙে ফেলার জন্য বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ক্ষমতায়িত নারীর উত্থান আসলে নারীবাদের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- নারীর ক্ষমতায়ন