কলেজের গান, কলের গান
আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমাদের যৌবনের সূচনাকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্রের গান; যেমন ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে...’ অথবা ‘যত লিখে যাই তবু না ফুরায়, চিঠিতো হয় না শেষ,...তুমি আজ কত দূরে...’। তারপর প্রতিমা মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে বাংলা গানের যাঁরা শিল্পী তাঁদের গান আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাতের বেলায় লেখাপড়া শেষে কোনো এক চায়ের দোকানে দুই কাপ চা চারজনে ভাগ করে নিয়ে ম্যানেজারকে বলে গানগুলো কলের গানে শোনানোর জন্য অনুরোধ জানাতাম। মাঝে মাঝে ম্যানেজার খুব বিরক্ত হতেন, রেকর্ড বদলাতে চাইতেন না। কারণ হিন্দি ও উর্দু গানেরও সমঝদার ছিলাম আমরা, সেই সব গানের ভক্ত ছিলাম। নওশাদের সুরে মোহাম্মদ রফির গান তখন খুবই জনপ্রিয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখন ‘নাগিন’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে বিখ্যাত হয়েছেন। উর্দু গজল, হিন্দি গান সমভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের শিল্পীরাও বেশ জনপ্রিয়—আব্দুল জব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আঞ্জুমান আরা, ফেরদৌসী রহমানসহ আরও অনেক সংগীতশিল্পী ছিলেন। পাশাপাশি আমাদের লোকসংগীতের বিশ্বমানের গায়ক আব্দুল আলীম, আব্বাসউদ্দীন আহমদ, হরলাল রায় আর পাকিস্তানের সুকণ্ঠী গায়িকা নুরজাহান আমাদের সংগীতের শ্রুতিকে মুগ্ধ করে রাখতেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি কিন্তু আমরা মেহেদী হাসান, আবিদ ওয়ালী মোহাম্মদের গানের ভক্ত। আর উচ্চাঙ্গসংগীতের তো কথাই নেই। নাজাকাত-সালামাত দুই ভাইয়ের সংগীতেরও আমরা ভক্ত ছিলাম।