বাংলাদেশ কি পরাশক্তির রেসলিং রিং হতে যাচ্ছে
কয়েকদিন আগে মতিঝিলের অফিসপাড়ায় এক বন্ধুর অফিসে কথা হচ্ছিল। বন্ধুটি আবার বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষনেতা। আলাপ প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাইলাম তাদের দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? যদি সরকার তাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে তারা শেষ পর্যন্ত কী করবেন? তিনি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বললেন, সরকারকে দাবি মানতে আমরা বাধ্য করব। এই সামনের ঈদের পরই দেখবেন আন্দোলন কাকে বলে। তখন সরকারের গদি ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না। তাকে বললাম, আপনার কথাগুলো শুনতে বেশ ভালো এবং উদ্দীপনাময়; বিশেষ করে আমরা যারা বিএনপির শুভাকাক্সক্ষী তাদের আশান্বিত হওয়ার মতো। কিন্তু এ পর্যন্ত যেভাবে অপনারা আন্দোলন টেনে নিয়ে এসেছেন, তাতে কি আপনি নিশ্চিত যে আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে সরকারের পতন ঘটাতে পারবেন? তিনি বললেন, ‘চারদিকের চাপে’ সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হবে। তাকে বললাম, ধরুন সরকার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে গদিতে বসে থাকল, এদিকে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হয়ে গেল, তখন আপনারা কী করবেন? তখন তো আন্দোলনও করতে পারবেন না, নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে পারবেন না। একটু গম্ভীর হয়ে তিনি বললেন, তখন কী হবে তার সিদ্ধান্ত হাইকমান্ড নেবে। তারা নিশ্চয়ই তা ভেবে রেখেছে। সবশেষে মুচকি হেসে বললেন, সাংবাদিক সাহেব, একটু সবুর করুন খেলা দেখতে পাবেন। এবার একটা কিছু হবে।
বিএনপি নেতাদের এই ‘একটা কিছু হবে’ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই সচেতন মহল ধন্দে আছে। এই ‘একটা কিছু’ যে কী, তা তারা পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না বা বলেন না। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিএনপির যে কোনো নেতাকে জিজ্ঞেস করলেই বলেন, একটা কিছু হবে। কিন্তু সেই একটা কিছুর স্বরূপ তারা বলতে পারেন না। এমনকি কীভাবে তা সম্ভবপর হবে তা-ও বলতে পারেন না। আসলে এই ‘একটা কিছু’ একটি বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। এই বিশ্বাসের ওপর ভর করেই বিগত প্রায় ১৫টি বছর বিএনপির নেতা-কর্মীরা সরকারের নির্যাতন সহ্য করে চলেছেন, মামলার আসামি হয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জীবনের মূল্যবান সময় ক্ষয় করছেন। তারা বিশ্বাস করেন শীর্ষ নেতাদের আশ্বাসের ওপর- ‘একটা কিছু হবে’। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা বেশ আস্থার সঙ্গেই বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হবে।