
মধ্যবিত্তের সংস্কৃতি
এ কথা সত্য যে, মধ্যবিত্তই মধ্যবিত্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। জনজীবনে যে অভাব আছে, সেখানে যে দুঃখের একটা ভীষণ স্রোত অনর্গল প্রবহমান, সে বিষয়ে মধ্যবিত্তের কোনো দুশ্চিন্তা নেই এমন নয়। দুশ্চিন্তা যথেষ্ট আছে। অভাব ও দুঃখ মোচনের জন্য চেষ্টাও আছে। কিন্তু সেখানেও স্বার্থবোধটা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। যতই পরিবর্তন হোক, মধ্যবিত্ত চাইবে প্রচলিত ব্যবস্থাটা ভেঙে না পড়ুক। সংশোধন চাই, কিন্তু সংশোধন ব্যবস্থাটাকে আস্ত রাখার জন্যই দরকার। আমরা আলোচনা করব, কিন্তু হৃদয়হীনের মতো নয় বরং পিতৃদুর্বলতার সমালোচক-ছেলের মতো। আকাঙ্ক্ষা এ রকমের যে, ব্যবস্থাটা টিকে থাকুক এবং সংশোধনের ভেতর দিয়ে যেসব নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে তার বড় ভাগটা আমাদের হাতে ধরা জালে এসে ধরা দিক। একে শঠতা বললে বেশি বলা হবে, এটা মধ্যবিত্তের চরিত্রেরই একটা দিক।
অর্থনীতির বিশেষ বিন্যাসের ওপরই এ শ্রেণির অবস্থান; কিন্তু এ সত্যটাকে সে চায় এড়িয়ে চলতে। অর্থ যত বাড়ে, ততই বাড়ে ঘরের আসবাব আর বাড়ে কতকগুলো অমূর্ত ধারণার তার উৎসাহ। তখন সে কথা তোলে চরিত্রের, সত্যের, নীতির, ন্যায়-অন্যায়ের। এরাও আসবাবই এক প্রকারের—মানসিক আসবাব। কিন্তু বড় বড় ধারণার নিচে নিয়ামক শক্তি যে স্থূল অর্থনীতি, সেই স্পষ্ট সত্যটাকে যতক্ষণ পারা যায়, যেভাবে পারা যায়, যতবার পারা যায় অস্বীকার ও উপেক্ষা করার কাজটা সমানে চলতে থাকে। যেন রৌপ্য মুদ্রার দাপটটা মেনে নিলেই শুভকর্মের সমস্ত শুচিতা বিনষ্ট হয়ে যাবে, যেন অর্থোপার্জনের ব্যতিব্যস্ত কাজটা অতিশয় নোংরা ও নীতিবিগর্হিত।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শিক্ষা
- মধ্যবিত্ত শ্রেণী