গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা কতটা বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হন এবং তাঁদের জীবন যে কতটা অনিরাপদ, তার একটা প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল এবারের ঈদুল ফিতরের পরের দিনটা। কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে একটি ট্রলারের জালে আটকে পড়া ডুবন্ত ট্রলার টেনে আনার পর সেখানে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। আলামত থেকেই সুস্পষ্ট, চরম নৃশংসতার শিকার হয়েই তাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন।
প্রযুক্তির উন্নয়ন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার কারণে সমুদ্রে নৌযান চালানো যখন অনেক নিরাপদ হয়ে উঠেছে, তখন আমরা এখনো পুরোনো যুগেই রয়ে গেছি। জাতীয় সমৃদ্ধিতে কাগজে-কলমে সমুদ্র অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তার খুব একটা প্রতিফলন নেই। এখনো আমাদের জেলেরা তাঁদের প্রাণবাজি রেখেই সমুদ্রে মাছ ধরতে যান।
ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করেই শুধু তাঁদের বেঁচে থাকতে হয় না; ডাকাত, জলদস্যুদের মতো শত্রুর সঙ্গেও প্রাণপণ লড়তে হয়। জেলেদের নিরাপত্তাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ হাজার ৩৫০ জনের বেশি জেলে শুধু নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবে সাগরে মারা যান। ডাকাতি, জলদস্যুতাসহ নিরাপত্তার অন্যান্য বিষয় যুক্ত করলে এ সংখ্যা যে আরও অনেক বেশি হবে, তাতে সন্দেহ নেই। জেলেপল্লিগুলোতে নিখোঁজের তালিকা সে কারণেই অনেক দীর্ঘ।
উপকূলের কয়েক লাখ জেলের জীবন চরমভাবে বিপন্ন। অথচ সমুদ্রকেন্দ্রিক এই জেলেরা দেশের মাছের চাহিদার বিশাল একটি অংশ পূরণ করেন। তাঁদের ধরা মাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হয়।