অসুস্থ ছাত্রীকে রুমে ডেকে ‘কান ধরিয়ে দাঁড় করালেন’ ছাত্রলীগ নেত্রী
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) র্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থী হয়রানির অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে জান্নাতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা জয়া। তিনি গত সোমবার (৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বরাবর এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
তাঁর দাবি একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। একপর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় জয়াকে জামালপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে এখন বাড়িতে রয়েছেন।
তবে এ নিয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়ে ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে জান্নাত দাবি করছেন, তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। এদিকে অভিযোগ পাওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেছেন, এ নিয়ে তদন্ত চলছে।
এ নিয়ে জয়া জানান, গত বৃহস্পতিবার ফিশারিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নূরে জান্নাত তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে বলেন। পরে অসুস্থ শরীর নিয়েই গত রোববার (২ এপ্রিল) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে হলে আসেন তিনি। হলে প্রবেশ করার পর একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিএসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। পরদিন সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী এনিকে নিয়ে হলের ২৩৪ নম্বর কক্ষে তাঁকে আবার যেতে বলা হয়। নূরে জান্নাতের সঙ্গে দেখা করে ক্লাসে যেতে বলা হয়। কথামতো ওই কক্ষে গেলে ওই একই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আবারও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় এনির সামনেই ১০ মিনিট কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তাঁকে। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
জয়া আরও বলেন, ‘আমাকে হলে যে বিষয়ের জন্য ডাকা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই জানতাম না। কেন হলে নিয়ে আমাকে এ রকম মানসিক নির্যাতন করা হলো, তা জানি না। আমি অসুস্থ থাকার পরও বেশ কয়েকবার আমাকে হলে ডাকা হয় এবং সেখানে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি সেখানে। এ বিষয়ে আমি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রেমসংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে এনি নামে এক শিক্ষার্থী নূরে জান্নাতের কাছে হয়তো কোনো নালিশ দিয়েছিলেন। পরে নূরে জান্নাত দুজনকে হলে ডেকে নিয়ে এ ঘটনা ঘটান।
এ নিয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী এনি বলেন, ‘আমি নূরে জান্নাত আপু বা অন্য কারও কাছেই কোনো বিষয়ে বিচার দিইনি। সে দিনই হলে গিয়ে নূরে জান্নাত আপুকে আমি প্রথম দেখি। এর আগে তাঁকে আমি চিনতামও না। হলে আমাকে এবং জয়া আপুকে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। একপর্যায়ে জয়া আপু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরীক্ষা থাকায় কিছুক্ষণ পর হল থেকে আমি চলে আসি।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী নূরে জান্নাত বলেন, ‘আমি এ বিষয় কিছু জানি না। আমায় শুধু শুধু হয়রানি করা হচ্ছে। ওই মেয়ে তো আগে থেকেই অসুস্থ ছিল।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো আমি কিছু জানি না। কিছু শুনিওনি। আমার কাছে এ নিয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ বা কেউ কিছু বলেনি।’