তিস্তার একতরফা পানি প্রত্যাহারের অশুভ পরিকল্পনা!

www.ajkerpatrika.com প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৩, ১৩:২৯

দীর্ঘ দুটি নতুন খাল খননের মাধ্যমে তিস্তায় আবারও পানি প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে ভারত। তিস্তার এই একতরফা পানি প্রত্যাহারের অশুভ পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। পরিকল্পনা অনুযায়ী গজলডোবা ব্যারাজ থেকে ৩২ কিলোমিটারের একটি দীর্ঘ খাল খনন করা হবে, যা তিস্তা এবং একই সঙ্গে জলঢাকা নদীর পানি কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। অপর খালটির দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার। এ খালটি তিস্তার বাঁ তীর থেকে খনন করে নিয়ে যাওয়া হবে। স্থানীয় কৃষিকাজে সহায়তার জন্য ৪ মার্চ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবা তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের অধীনে এই দুটি খাল খননের কাজ শুরু করেছে ভারত। এই খাল খননের জন্য প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। খাল খননের ফলে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলার লক্ষাধিক হেক্টর কৃষিজমি সেচের আওতায় আনতে সাহায্য করবে। ভারতের এই খাল খননের সিদ্ধান্তে আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে চলেছে তিস্তার পানিচুক্তি। ফলে শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশে পানিপ্রবাহ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


খাল কেটে শুধু পানি প্রত্যাহার নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার দার্জিলিং এলাকায় ‘বড়া রঙ্গিত’ নদীতে তিস্তা ড্যাম প্রকল্প-১ ও ২ স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে যৌথভাবে ৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। যে বড়া রঙ্গিত নদীতে এই প্রকল্প দুটো নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেই নদীটি তিস্তা নদীর যে অংশ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে, সেই অংশের সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে এই দুটি প্রকল্প শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ আরও কমিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাতে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। ভারত বছরের পর বছর তিস্তার পানিচুক্তি হবে, হচ্ছে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা সত্ত্বেও, নীরবে, 
নিঃশব্দে তিস্তার পানি প্রত্যাহারের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজটিও পাশাপাশি এগিয়ে নিয়ে গেছে। খাল খননের জন্য যে বিপুল পরিমাণ জমির প্রয়োজন, সেই পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ এত সহজ ও স্বল্প সময়ের বিষয় নয়। তারা নিশ্চয়ই জমি অধিগ্রহণের কাজটি অনেক আগে থেকেই শুরু করেছে।


এ কারণেই হয়তো গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় তিস্তা চুক্তি নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য হয়নি। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের বন্ধুত্বের প্রতিদান যদি এই হয়, তাহলে পারস্পরিক আস্থার জায়গাটি থাকে কোথায়? ভারতের এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশের মানুষকে আহত 
করেছে নিঃসন্দেহে।


তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই দেনদরবার হয়ে আসছে। ২০১১ সালে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সব আয়োজন সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য শেষ পর্যন্ত সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। তার পর থেকেই এই চুক্তির ব্যাপারে ভারত টালবাহানা করে আসছে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের অসহযোগিতার জন্য চুক্তি করা যাচ্ছে না বলে পাশ কাটিয়ে যায়। ভারতের এমন প্রবণতা বা কূটকৌশল অনেক আগে থেকেই লক্ষ করা গেছে।


দু-একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। আমাদের দেশের উদারনীতির সুযোগে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর অবাধ প্রচারব্যবস্থা চালু আছে। আমাদের দেশে ভারতের চ্যানেলগুলোর অবাধ প্রচারের সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের কোনো চ্যানেল ওপারে প্রচারের সুযোগ পাচ্ছে না। তারা বলে বেড়ায়, ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল প্রচারে সরকারের কোনো আপত্তি নেই; বরং আন্তরিক ইচ্ছা থাকলেও ওখানকার কেব্‌ল অপারেটরদের অসহযোগিতার জন্য তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বাংলাদেশের চ্যানেল মালিকপক্ষ তাদের কেব্‌ল অপারেটরদের সন্তুষ্ট করতে পারলে ভারতে প্রচারের প্রবেশাধিকার পাবে। এর জন্য আমাদের চ্যানেলগুলোকে তাদের অপারেটরদের বার্ষিক দুই থেকে তিন কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে। অথচ ভারতের শতাধিক চ্যানেল চালু থাকলেও এ জন্য তারা এক কানাকড়িও আমাদের কেব্‌ল অপারেটরদের দেয় না; বরং তাদের পে-চ্যানেলগুলোর জন্য আমাদের বার্ষিক ন্যূনতম দুই হাজার কোটি টাকা দিতে হয়।


আরও একটু পুরোনো দিনে যদি ফিরে যাই—বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৭৪ সালের মে মাসে ‘মুজিব-ইন্দিরা’ চুক্তি স্বাক্ষরের কত বছর পর তিনবিঘা করিডর ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার বাংলাদেশি নাগরিকেরা? চুক্তির পরপর চুক্তি অনুযায়ী আমাদের সংসদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে একই বছরের নভেম্বরে দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের কাছে হস্তান্তর করলেও ভারত সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করতে থাকে। তারা খুব কায়দা করে সম্পাদিত চুক্তির বিপক্ষে ভারতীয় দুটি উগ্র সংগঠনের জন্ম দেয়। সংগঠন দুটি হলো ‘ভারতীয় কুচলীবাড়ি সংগ্রাম সমিতি’ এবং ‘তিনবিঘা সংগ্রাম সমিতি’।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও