যেখানে সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা হয়, সেখানে সমাজের কল্যাণ হয়, শিক্ষার উন্নয়ন হয়, তরুণ প্রজন্মও এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা পায়। কিন্তু এসব যেন পাঠ্যপুস্তকের কথা হিসেবেই থেকে যাচ্ছে। এখন পদে পদে ক্ষমতাচর্চা ও পেশিশক্তির দাপটে কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয় মানুষকে। প্রশাসনের কাছে গেলেও অনেক সময় কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি নাটোরের সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নে। সেখানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দিয়ে অবাধে মাটিবাহী ট্রাক ও ট্রাক্টরের দাপাদাপি চলছে। এতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে সেখানে অবৈধ মাটির ব্যবসা চলছে। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ সাহস পাচ্ছেন না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মাটিবাহী ট্রাক ও ট্রাক্টরের দাপাদাপির কারণে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইটালী ইউনিয়নের ইন্দ্রাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকা। বিদ্যালয়ের আঙিনা, চেয়ার-টেবিল ঢাকা পড়েছে ধুলার আস্তরণে। আশপাশের গাছগাছালি ও ঘরবাড়িতেও একই অবস্থা। ট্রাক-ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ার ভয়ে শিক্ষার্থী–শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের মাঠে নামেন না। শিশুরা যাতে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে মাঠে না আসে, সে জন্য মাটি ব্যবসায়ীরা বেত হাতে এক ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখেন। তিনি শিশুদের মাঠে নামলে পেটানোর ভয় দেখান। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন দৃশ্য কি কোনোভাবে কল্পনা করা যায়?
বিদ্যালয়টিতে ১৫৬ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক আছেন। ধুলাবালু আর শব্দদূষণের কারণে তাঁরা একরকম বন্দি জীবনযাপন করছেন। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ধুলার কারণে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, সেখানকার সংসদ সদস্যের অনুসারী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুর রহমানের নেতৃত্বে মাটি ব্যবসায়ীরা এলাকাটিতে অবৈধভাবে মাটি খুঁড়ছেন। তাঁরা ওই গ্রামের অনেকের পুকুর ভরাটের চুক্তি নিয়ে ট্রাক্টরে করে মাটি বিক্রি করছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরাও এ অপর্কমে তাঁদের সমর্থন করছেন।
গত মঙ্গলবার প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা গিয়ে মাটি তোলার যন্ত্রের কয়েকটি ব্যাটারি জব্দ করেন, যা অনেকটা লোকদেখানো বলা যায়। এখন পর্যন্ত মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখনো বিদ্যালয়টির সামনে ট্রাক-ট্রাক্টর চলাচল করছে। এটিকে ক্ষমতাচর্চার ঔদ্ধত্যতা ছাড়া কী বলা যায়? ফলে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন সিংড়া উপজেলার মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে। পরিবেশদূষণ ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ছাড় নয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মাঠ দখল
- বিদ্যালয়ের মাঠ