রোহিঙ্গাদের নিয়ে আরেকটি ‘মেড ইন চায়না’ উদ্যোগ?
রোহিঙ্গাদের ওপর দুনিয়া-কাঁপানো নিপীড়ন নিয়ে গণচীন গত পাঁচ বছরে কখনো উচ্চ স্বরে নিন্দা করেনি মিয়ানমারের; প্রতিবাদ তো নয়ই। নিপীড়নের তদন্ত ও বিচারের প্রসঙ্গ এলে আন্তর্জাতিক পরিসরে তার বিরোধিতা করেছে।
এরপরও তারা রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের বড় এক ভরসার দেশ! সেই চীন এখন পাইলট আকারে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়। প্রশ্ন উঠেছে, এ-সংক্রান্ত পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত, কতটা গ্রহণযোগ্য?
এ উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে কি না? আরাকান আর্মির সঙ্গে কোনো পরিসরে যোগাযোগ হয়েছে কি না? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চলমান এ প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত কি না? এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে কিছু রোহিঙ্গাকে যেনতেনভাবে মিয়ানমারের জেনারেলদের হাতে তুলে দেওয়া ভুল-বোঝাবুঝি এবং বিপদ তৈরি করতে পারে।
নতুন উদ্যোগের খবর
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের বেশ কয়েকবার কথাবার্তা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ওখানকার সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একদফা চুক্তিও হয়। তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মাহমুদ আলী। নেপিডোতে স্বাক্ষরিত ওই সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী দুই মাসের ভেতর ‘মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের স্বেচ্ছায় নিরাপদে ফেরত পাঠানো এবং পুনর্বাসন’ হওয়ার কথা। তবে পাঁচ বছরেও তা হয়নি। কেন হয়নি, সে বিষয়ে কেউ কখনো ব্যাখ্যাও দেয়নি, জবাবদিহিও করেনি। মিয়ানমারের অসহযোগিতাই হয়তো বড় কারণ। সেই হতাশাজনক পটভূমিতেই সম্প্রতি নতুন করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কথা উঠেছে।
রোহিঙ্গা বিষয়ে ২০১৭ সালের সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল চীনের আগ্রহে। এবারও নতুন উদ্যোগে তাদেরই বেশি আগ্রহের কথা শোনা যাচ্ছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ঠেলে দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ওই চুক্তি করে ফেলে।
কূটনীতিকেরা ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের কথা, সেখানকার রোহিঙ্গাবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনের কথা না থাকা এবং প্রত্যাবর্তন-পরিকল্পনার বিস্তারিত সময়সূচি না থাকায় বিস্মিত হয়েছিলেন। দ্রুত একটা চুক্তি করিয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর কৌশল ছিল তখন হয়তো চীনের, যার অংশ হিসেবে সে সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা এসেছিলেন। তাঁর ঢাকা আসার ১০ দিনের মধ্যে এই চুক্তি হয়।