ইরান-সৌদি সমঝোতা ও মধ্যপ্রাচ্যে চীনের কূটনৈতিক অভ্যুত্থান
হুট করেই যেন মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক আবহে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাত বছর পর ইরান ও সৌদি আরব আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। ইরান-সৌদির সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আচমকা ঘোষণায় মধ্যস্থতা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চীন। অনেকেই ইরান-সৌদি সম্পর্কের নতুন মোড়কে এই অঞ্চলে চীনের নীরব কূটনৈতিক অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করছেন। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমতে শুরু করেছে বলে যে আলাপ চলছে, তা আরও স্পষ্ট হলো। অনেকে বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরির শেষের শুরু। শেষের শুরুটা বলা হয়তো অতিরঞ্জিত হয়ে যাবে। তবে এই ঘটনায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা নতুন করে ঝুঁকির মুখে পড়বে।
২০১৬ সালে শিয়া মতাবলম্বী ধর্মগুরু শেখ নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ডকে ঘিরে ইরান-সৌদির তিক্ততার শুরু। সৌদি তরফে অভিযোগ ছিল ইরানের আশকারায় শিয়ারা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিল। শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে হামলা করে ইরানিরা এবং ইরান-সৌদি সম্পর্কের অবসান ঘটে।
এর পর থেকেই আরবের রাজনীতিতে মুখোমুখি অবস্থানে আছে সৌদি আরব ও ইরান। ইয়েমেন, ইরাক সব জায়গাতেই এই দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছাপ ছিল স্পষ্ট। ইয়েমেনের সরকারকে সমর্থন করছে সৌদি আরব। আর হুতি বিদ্রোহীদের সর্বতোভাবে সহায়তা করছে ইরান। ইরাকেও রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে এই দুই দেশের প্রবল ভূমিকা রয়েছে।
কূটনৈতিক লড়াইয়ে বিবদমান এই দুই দেশকে নিয়ে চীন বেইজিংয়ে বসেছিল। এবং আপাতত চীন সফল হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে দূতাবাস খুলবে দুই দেশ। সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সচিব আলী শামখানি ও সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপদেষ্টা মুসাদ বিন মুহাম্মদ আল আইবান। আল-জাজিরায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে শামখানি ও আইবান হাসিমুখে করমর্দন করছেন। আর দুজনকে ধরে মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন চীনের ঊর্ধ্বতন কূটনৈতিক ওয়ান ই।
অনেক সময় ছবি হাজারো শব্দের কথা একসঙ্গে বলে দেয়। এই ছবিটাকে এভাবে বিশ্লেষণ করা যায়—মধ্যপ্রাচ্য দখলে এবার চীন ইরান ও সৌদি আরবকে নিয়ে এগোতে চাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আরবের রাজনীতিতে চীনের সম্পৃক্ততা আরও গভীর হবে। চীনের এই সফলতা বিশ্বরাজনীতিতেও বিস্তৃত হতে পারে। সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চীনের মতোই মধ্যস্থতাকারীর অনুসন্ধান করছিল। এই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এমন দেশকে দেখা গেল যে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ থেকে আসেনি। এমনকি রাশিয়াও না।