বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ: মানবসম্পদ তৈরিতে যেভাবে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগের সমাপ্তি ঘটেছে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কী বিষয়ে তারা ভর্তি হবে, এবার সেই উদ্বেগের সূচনা হলো।
একবিংশ শতাব্দীতে মানবসম্পদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকলেও এই সম্পদের সুবাদে একটি দেশ সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। জাপান, তাইওয়ান ও কোরিয়া তার উদাহরণ। প্রাকৃতিক সম্পদের ছড়াছড়ি থাকলেও যে আধুনিক ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হওয়া যায় না, তার উদাহরণ হলো সব কটি আরব দেশ।
আমাদের দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের ছড়াছড়ি নেই। যা-ও আছে, বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সুবাদে গ্যাস জ্বলে গেলেও আমরা ক্ষতিপূরণও দাবি করতে পারি না। টাকা চুরি হয়ে গেলেও ফেরত পাই না।
ষাটের দশকে উন্নয়নের মাপকাঠিতে আমরা ও কোরিয়া একই কাতারে ছিলাম। তারা মানবসম্পদ উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে এখন সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে। শহরসর্বস্ব নয় এমন সব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। ভারতের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪০০, চীনের ১৫০ আর আমাদের হলো ১ হাজার ২৫০। এই সম্পদে মূল্য সংযোজন করতে পারলে আমরা হতে পারতাম সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ।
জাপানে মাটির নিচে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ থাকলেও প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। তাই বিভিন্ন দেশ থেকে তাকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এসব মরচে পড়া লোহালক্কড় তাদের প্রযুক্তির দক্ষতায় হয়ে ওঠে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ক্যামেরাসহ নানা পণ্য। যেসব দেশ থেকে লোহালক্কড়গুলো কিনেছিল, এসব পণ্য ওই সব দেশেই রপ্তানি করে কিলোগ্রামপ্রতি হাজার ডলার দামে।
এই মাপের মূল্য সংযোজন আমরাও করতে পারি, যদি শিক্ষাকে আমরা যথাযথ গুরুত্ব দিই। আমাদের দেশে ছাত্রসংখ্যা প্রায় চার কোটি। পৃথিবীতে প্রায় ২৩০টি দেশ রয়েছে, যার মোট জনসংখ্যা এর থেকে কম। সীমিত সম্পদের দেশে এই ছাত্রগোষ্ঠীর জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যয়সাশ্রয়ীভাবে নিশ্চিত করা মোটেই সহজ নয়। বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে অবশ্যই আমাদের অত্যন্ত উচ্চ উৎপাদনশীলতাসম্পন্ন পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হবে।