নীতিহীন সমাজের অগ্রগতি হয় না
গত তিন-চার দিনের ঘটনাপ্রবাহে অন্য অনেকের মতো আমিও বিস্মিত হয়েছি। মানে এত বড় পরিবর্তন অপ্রত্যাশিত, যা আকস্মিকভাবে ঘটে গেছে। এটিও আমাদের রাজনীতিতে বহুলপ্রচলিত যে, বলা হয়ে থাকে-রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেটারই একটি বিরাট প্রতিফলন ঘটল গত তিন-চার দিনের ঘটনায়। ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’-এ বহুল ব্যবহৃত কথাগুলো কিন্তু আমাদের রাজনীতির অন্তঃসারশূন্যতার প্রতিই দিকনির্দেশ করে। রাজনীতিতে নীতি বলে কিছু নেই-এ কথা শুনে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি এ কথার সঙ্গে। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে, এটা আমাদের সবার কাছেই স্পষ্ট হয়, যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় যেতে চান, তারা আদর্শিক দৃঢ়তা ও জোরালো নৈতিক অবস্থানে অটল থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিবিদরা দেশ ও দেশের মানুষের বৃহত্তর কল্যাণে হবেন নিবেদিতপ্রাণ। এর বত্যয় ঘটলে মানুষ হতাশ হন, দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশে সুবিধাবাদের রাজনীতি চলে আসছে বহুদিন ধরে। এটা আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য।
বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দলের নীতিতে কিছু পরিবর্তন আসে, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিতেও কিছু পরিবর্তন আসে। কিন্তু এটি রাতারাতি হয় না। এটি বলা হয়ে থাকে-আমাদের কোনো নীতি নেই, সেটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের দেশে যারা রাজনীতি করেন, তাদের বড় অংশের যে নীতি নেই, গত তিন-চার দিনের ঘটনাপ্রবাহে আবারও তা স্পষ্ট হলো। এবং এটিও আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার কথা বলেন, যারা ভোটের কথা বলেন, যারা নির্বাচনের কথা বলেন, তাদের অনেকেরই বোধহয় আসলেই কোনো নীতি নেই।
এনসিপির এসব পদক্ষেপে দলটির ভেতরের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, পদত্যাগ করেছেন, প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ জায়গাটাই একমাত্র আশার জায়গা যে, দলটির সবাই আর্দশচ্যুত হয়ে যাননি। এ বিরাট গণ-অভ্যুত্থান করে এত বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু নেতা এখনো অবশিষ্ট আছেন, যাদের কাছে নীতি বা আদর্শটাই প্রধান, নিজের আখের বা সুবিধার ব্যবস্থা করাটা প্রধান বিবেচ্য নয়। এটাই হলো, একমাত্র আশার জায়গা।
তবে আশঙ্কা হয়, এনসিপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এবং জামায়াতের সমমনা অন্য দলগুলোর সঙ্গে যে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাচ্ছে, সেখানে কতটি আসন জামায়াত তাদের ছেড়ে দেবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু যতটাই আসন ছেড়ে দিক, আমার মনে হয় না, জনগণ তাদের আর ভোট দেবে। তারা এককভাবে নির্বাচন করলে হয়তো সুবিধা হতো না; কিন্তু ভবিষ্যতের রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের একটা ভূমিকা থাকত। সংসদে না থাকতে পারলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের একটা ভূমিকা থাকত; আমরাও তাদের কথার মূল্য দিতাম। এ জোটের কারণে হয়তো সংসদে তাদের কয়েকজন প্রতিনিধি যেতে পারবেন; কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধা ছিল, তাদের আত্মত্যাগের প্রতি যে সম্মান ছিল, তাদের নিঃস্বার্থপরতাকে আমরা যেভাবে বরণ করে নিয়েছিলাম, সেই জায়গা থেকে তারা দূরে সরে গেলেন! আমার মনে হয়, জনগণের মনে এটি দাগ কাটবে। ভোটের মাঠে এ নির্বাচনে এনসিপিরই যে ক্ষতি হলো তাই নয়, অন্য যারা আছেন, তাদের জন্যও-তাদের আদর্শের জায়গাও নড়বড়ে হয়ে গেল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনৈতিক দল
- পরিবর্তন
- নীতি