আওয়ামী লীগ ভোট বাড়াচ্ছে, না কমাচ্ছে?
রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘অতীত ভুবনে ভুবনে গোপনে’ কাজ করে কি না, জানি না। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতির অতীত যে বর্তমানকে শান্তিতে থাকতে দেয় না, নিরুত্তাপ জাতীয় সংসদে সেটা আবারও প্রমাণিত হলো। লালমনিরহাট-১-এর সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মোতাহের হোসেন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জামানত হারিয়েছিলেন।
আর যায় কোথায়? জাতীয় পার্টির সদস্যরা সমস্বরে প্রতিবাদ করতে থাকেন, ‘এটা মিথ্যাচার। এটা মিথ্যাচার।’ তাঁদের দাবি, ওই বছর এরশাদ নির্বাচনই করেননি। এ বিতর্কের জের পরদিনও চলতে থাকে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক, যিনি দলের মহাসচিবও। তিনি বলেছেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিল। আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চূড়ান্ত সময়ে এসে বললেন, তিনি নির্বাচন করবেন না এবং সারা দেশের সব প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য চিঠি দেন।
সেদিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। সেদিন এমন অবস্থা হয়েছিল...বিএনপি নির্বাচনে আসে না, কোনো দল আসবে না...। জাতীয় পার্টি যদি না আসে, তাহলে বাংলাদেশে একটা অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। ...সেদিন বেগম রওশন এরশাদ এবং আমরা কয়েকজন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বেইমানি ও বিদ্রোহ করে বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচন করেছিলাম।’ (প্রথম আলো, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)
এর মাধ্যমে মুজিবুল হক ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়ার গুমর ফাঁস করলেন। এত দিন বিএনপির নেতারা ২০১৪ সালের নির্বাচনকে পাতানো নির্বাচন বলতেন। এখন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ‘বেইমানির নির্বাচন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আবার সংবিধান রক্ষার দোহাইও দিয়েছেন। অতীতে বিএনপিও সংবিধান রক্ষার দোহাই দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করেছিল। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রে অসংখ্য রেকর্ড আছে। ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করাও একটি রেকর্ড বটে। অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ দৃশ্য দেখা যাবে না।
এ প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ নেতারা ২০২৪ সালের নির্বাচন কোনোভাবে ২০১৪ ও ২০১৮-এর মতো হবে না বলে দেশবাসীকে এবং বিদেশি বন্ধুদের আশ্বস্ত করে যাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, এবারের নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সেই ধরনের একটি নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছে কি না। দলের নেতাদের কর্মকাণ্ড ও বক্তৃতা-বিবৃতি দেখে মোটেই আশ্বস্ত হতে পারছি না।
গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ অনেক উন্নয়ন করেছে। তারা পদ্মা সেতু করেছে, মেট্রোরেল করেছে। এক্সপ্রেস হাইওয়ে করেছে। এতে মানুষের যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। মানুষের গড় আয় ও গড় আয়ু বেড়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা বুঝতে পারছেন না যে কেবল উন্নয়ন দিয়ে জনপ্রিয়তা কিংবা জনগণের আস্থা ধরে রাখা যায় না। গণতান্ত্রিক দেশে মানুষ কথা বলার স্বাধীনতা চায়, চিন্তা করার স্বাধীনতা চায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চায়।