জাবেদ মোল্লার কাছ থেকে এমপিরা কি শিক্ষা নেবেন?
বইপত্রে যে কথাটি লেখা থাকে, তা হলো, গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের জমাখরচের পাই-পয়সার হিসাব জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছে দিতে বাধ্য। আর যেটি লেখা থাকে না, সেটি হলো, জনগণের প্রতিনিধি বলতে যা বোঝায়, জনপ্রতিনিধিরা মোটেও তা নন; সুতরাং সরকারি বরাদ্দের হিসাব তাদের কাছে দেওয়ার বাধ্যবাধকতার প্রশ্নই ওঠে না। অথচ ‘আমাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবেই’—এমন মুখস্থ বিবেকী উচ্চারণ জনপ্রতিনিধিদের মুখে অহরহ শোনা যায়। আর যখনই একজন ভোটার জনপ্রতিনিধির কাছে জনস্বার্থ সংক্রান্ত, বিশেষত অর্থসংক্রান্ত তথ্য জানতে চান, তখন সেই জনপ্রতিনিধির মেজাজ খারাপ হয়।
তথ্য অধিকার আইন পাশ করেও তাঁদের সেই মেজাজের লাগাম টানা যায়নি। কারণ সরকারি বরাদ্দের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করা এবং জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহি করার ঘটনা এই দেশে বিরল। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কার্যক্রমের আর্থিক বিষয় নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের লুকোছাপা করা প্রায় স্বীকৃত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই অদ্ভুত উল্টো নিয়মের মধ্যে দাঁড়িয়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার একজন ইউপি চেয়ারম্যান বইপত্রে লেখা কথার মতো একটি কাজ করে বসেছেন। তাঁর ইউনিয়নের লোকজন এসে তাঁকে ইউপির টাকা পয়সার হিসাব দিতে বলেননি। কিন্তু তিনি এবং তাঁর ইউপি সদস্যরা দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তির দিন গোটা ইউনিয়নবাসীকে গত শুক্রবার একটি সভায় ডেকেছিলেন। সভার শিরোনাম ছিল ‘জনতার মুখোমুখি’। সেখানে তাঁরা বিগত এক বছরে কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন এবং সেই বরাদ্দের টাকা কখন কীভাবে খরচ হয়েছে এবং হচ্ছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। বিবরণের বস্তুনিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট নথিপত্রও তুলে ধরেছেন। এরপর ইউনিয়নের বাসিন্দারা এই নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন করেছেন এবং তাঁরা সেসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সভাটি হয়।
ওই ইউপির নাম চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। ইউপির চেয়ারম্যানের নাম জাবেদ মোল্লা। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলার চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি। এ ছাড়া সেখানে তিন হাজারের বেশি ইউনিয়নবাসী হাজির ছিলেন।
জনসাধারণ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের উন্নয়ন, দুর্নীতি ও সফলতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সেসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। কোন সড়কের কাজ কতটুকু হয়েছে, কোনো কাজ শেষ হয়েছে, কোন কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে, ইউপির তহবিলে আর কত টাকা আছে—এসব তিনি সবাইকে খুলে বলেছেন।