ডিসি সম্মেলন ও আগামী নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ
মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা এ পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে উপসচিবের নিয়মিত পদ রয়েছে সাড়ে আটশর মতো। কিন্তু সতেরোশর বেশি উপসচিব রয়েছেন। এসব কর্মকর্তার মধ্য থেকে 'ভাগ্যবান' ৬৪ জন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান। মেধা ও মাঠ প্রশাসনে দক্ষতার পাশাপাশি তদবিরও অনেক সময় ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। মন্ত্রণালয়ে সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবের নিচের পর্যায়ের ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা অর্থাৎ উপসচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিবের অত গুরুত্ব না থাকলেও জেলা পর্যায়ে ডিসি গুরুত্বপূর্ণ পদ। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবেও সিনিয়র সহকারী সচিবদের মধ্যে বলা চলে ভাগ্যবানরাই নিয়োগ পেয়ে থাকেন।
জেলা পর্যায়ে নির্বাহী বিভাগের প্রধান তথা ডিসি হওয়ার জন্য উপসচিবদের আগ্রহ থাকলেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেই আগ্রহে যেন ভাটা পড়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের ডিসি সম্মেলন। সম্মেলনে মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কার্য অধিবেশনে অংশ নেবে। সোমবারের সমকালে 'নির্বাচনের আগে কপালে ভাঁজ ডিসিদের' শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, 'এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত আটটি জেলার ডিসির সঙ্গে কথা হয়েছে সমকালের। তাঁদের প্রত্যাশার কথা জানতে চাওয়া হলে আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক দুশ্চিন্তার প্রসঙ্গ টেনেছেন একাধিক ডিসি। তবে তাঁদের কেউই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি।' অব দ্য রেকর্ড বা অন দ্য রেকর্ড যেভাবেই ডিসিরা এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন না কেন, তাঁদের দুশ্চিন্তার কারণ বুঝতে অনেক গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন ডিসিরা। তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী থাকে, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তাঁরা। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে কিনা, সেই চিন্তাও আছে কারও কারও মাথায়। তাই এই স্বল্প সময়ের জন্য সরকারের গুড বুকে নাম লেখাতে গিয়ে হয়তো পরিবর্তিত সরকারের রোষানলে পড়তে চান না তাঁরা। ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা অন্যতম নিয়ামক, এর বাস্তবতাও সমকালের প্রতিবেদনে স্পষ্ট। উত্তরবঙ্গের একটি জেলার ডিসি বলেছেন, পর্যায়ক্রমে আমাদের পদটি (ডিসি) অনেকটা রাজনৈতিক রং পেয়ে যাচ্ছে। কে কোন সরকারের আমলে ডিসি ছিলেন, সেটি এখন গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। বিশেষ করে পদোন্নতি, গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে এসব দেখা হয়। তাই ডিসি হওয়ার অর্জনে যে আনন্দ, তার বিপরীতে দুশ্চিন্তাও আছে।